প্রতিদিন কত ওয়াক্ত নামাজ ফরজ?

নামাজ (সালাত) ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ এবং প্রতিদিনের জন্য ফরজ ইবাদত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। নিচে তা কুরআন ও হাদীস থেকে দলিলসহ উল্লেখ করা হলো:


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ:

  1. ফজর (Subh) — ভোর

  2. যোহর (Zuhr) — দুপুর

  3. আসর (Asr) — বিকেল

  4. মাগরিব (Maghrib) — সূর্যাস্তের পর

  5. এশা (Isha) — রাত


কুরআন থেকে দলিল


১. সূরা হুদ, আয়াত ১১৪

وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ

উচ্চারণ: ওয়া আকিমিস্ সালাতা তরাফাইন্নাহারি ওয়া যুবালাফাম্ মিনাল লাইল্

অনুবাদ: আর আপনি নামাজ কায়েম করুন দিনের দু'প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে।

এই আয়াতে বোঝা যায়:

  • দিনের দুই প্রান্ত = ফজর ও মাগরিব

  • দিনের মধ্যবর্তী সময় = যোহর ও আসর

  • রাতের সময় = এশা


২. সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৭৮

أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيْلِ وَقُرْءَانَ ٱلْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْءَانَ ٱلْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا

বাংলা উচ্চারণ: আকিমিস্ সালাতা লি দুলূকিশ্ শামসি ইলা গাসাকিল লাইলি, ওয়া কুরআনাল ফাজরি, ইন্না কুরআনাল ফাজরি কানা মাছহূদা।

বাংলা অনুবাদ: সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের কুরআন পাঠ করো। নিশ্চয়ই ফজরের কুরআন পাঠ প্রত্যক্ষ হয় (ফেরেশতারা তা প্রত্যক্ষ করে)।

(সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৭৮)

ব্যাখ্যাঃ

  • "সূর্য ঢলে পড়া" = যোহরের সময়

  • "রাতের অন্ধকার" = এশা পর্যন্ত সময়

  • "ফজরের কুরআন" = ফজরের সালাত


হাদীস থেকে দলিল


১. সহীহ মুসলিম (হাদীস: ১১৬২)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

يَجِىءُ الْمَلَكُ إِلَى صَلاَةِ الْفَجْرِ، وَصَلاَةِ الظُّهْرِ، وَصَلاَةِ الْعَصْرِ، وَصَلاَةِ الْمَغْرِبِ، وَصَلاَةِ الْعِشَاءِ

বাংলা উচ্চারণ: ইয়াজীউউল মালাকু ইলা সালাতিল ফাজরি, ওয়া সালাতিদ্ দুহরি, ওয়া সালাতিল আসরি, ওয়া সালাতিল মাগরিবি, ওয়া সালাতিল ইশা।

বাংলা অনুবাদ: ফজরের নামাজে, যোহরের নামাজে, আসরের নামাজে, মাগরিবের নামাজে এবং ইশার নামাজে ফেরেশতা আগমন করে।

হাদীসের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা: এই হাদীসটি সালাতের গুরুত্ব ও সময়ানুগ আদায়ের প্রতি উৎসাহ প্রদানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্দিষ্ট নামাজের সময় ফেরেশতা নেমে আসেন, যেন তারা ইবাদতের সাক্ষী হন এবং আল্লাহর কাছে ওই আমলগুলো পৌঁছে দেন।

মূল শিক্ষা:

  1. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহর কাছে সরাসরি উপস্থাপিত হয় ফেরেশতার মাধ্যমে।

  2. প্রত্যেক নামাজের জন্য ফেরেশতা উপস্থিত থাকে, যা আমাদের ইবাদতের মর্যাদা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

  3. এ হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, নামাজ কেবল ইবাদতই নয় বরং ফেরেশতার উপস্থিতিতে আল্লাহর দরবারে জমা হয়।


২. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম (মিরাজের হাদীস)

রাসুলুল্লাহ ﷺ মিরাজে গিয়ে আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাতে প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ পেয়েছিলেন, পরে দয়া করে তা কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত করা হয় — কিন্তু প্রতিটি নামাজের জন্য ১০ গুণ সওয়াব দিয়ে ৫০-টির সওয়াব বহাল রাখা হয়।


সারসংক্ষেপ


ফজর: সুবহে সাদিকের পর ২ রাকাত (ফরজ)
যোহর: সূর্য ঢলার পর  ৪ রাকাত (ফরজ)
আসর: বিকেলের সময়  রাকাত (ফরজ)
মাগরিব: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ৩ রাকাত (ফরজ)
এশা: রাতের শুরু ৪ রাকাত (ফরজ)
Loading...