নামাজ কখন ফরয হয়?

নামাজ মুসলমানদের উপর মি‘রাজের রাতে, অর্থাৎ ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে বা ১০ নববী সালে, ২৭ রজব তারিখে ফরয করা হয়। এটি ছিল হিজরতের এক থেকে দুই বছর পূর্বে, অর্থাৎ হিজরতের আগের বছর।


সময় ও প্রেক্ষাপট: নামাজ মুসলমানদের উপর ফরয হয় মি‘রাজের রাতে, যা ঘটেছিল:
✓ সময়: ১০ম নববী বর্ষ (মক্কায় নবুয়তের ১০ম বছর)
✓ তারিখ: ২৭ রজব
✓ খ্রিষ্টাব্দ: আনুমানিক ৬২০ খ্রিষ্টাব্দ
✓ হিজরতের আগে: প্রায় ১.৫ বছর পূর্বে

এ রাতেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস (ইসরা) এবং সেখান থেকে সাত আসমান পেরিয়ে আল্লাহর কাছে নেওয়া হয় (মি‘রাজ)।


তবে আল্লাহ তায়ালা বলেন: "এই ৫ ওয়াক্ত নামাজও ৫০ ওয়াক্তের সমান সওয়াব পাবে। আমার সিদ্ধান্ত বদল হয় না।" (সহিহ বুখারি: হাদিস ৩২০৭)
 ইসরা ও মি‘রাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
  • ইসরা: রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • মি‘রাজ: সেখান থেকে তিনি সাত আসমান পেরিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত যান।
  • সেখানে তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ পান এবং নামাজ ফরযের আদেশ পান।
দলিল
(সূরা আল-ইসরা/বনি ইসরাইল, আয়াত ১)

হাদীস:
নামাজ হচ্ছে মি‘রাজের উপহার। এটি একমাত্র ইবাদত যা আকাশে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয করা হয়েছে। ইসলামে নামাজের গুরুত্ব এতই বেশি যে, ঈমানের পর এটিই প্রথম ফরয ইবাদত।

মি‘রাজের রাতে নামাজ ফরয হওয়ার ঘটনা

মি‘রাজের রাতে কী ঘটেছিল?

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য আল্লাহ তায়ালা মিরাজের রাতে অনেক সম্মানজনক ঘটনা ঘটান। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নামাজ ফরয করা আল্লাহ তাআলা প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ হজরত মুসা (আঃ)-এর পরামর্শে কয়েকবার ফিরে গিয়ে আল্লাহর কাছে তা হালকা করার অনুরোধ করেন। অবশেষে তা ৫ ওয়াক্তে কমিয়ে আনা হয়।

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লাযী আসরাা বি‘আবদিহী লাইলাম্ মিনাল মাসজিদিল হারা-ামি ইলাল মাসজিদিল আক্‌সা-ল্ লাযী বা-রাক্‌না হাওলাহু লিনুরিইয়াহু মিন আ-আয়া-তিনা; ইন্নাহূ হুওয়াস্-সামী‘উল বাসীর।

বাংলা অনুবাদ: পবিত্র ও মহান সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি সফর করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি—তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

✅ সহিহ বুখারী: হাদিস ৩২০৭

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ، وَهْوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ، فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ، يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، فَرَكِبْتُهُ، حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ"

বাংলা অনুবাদ (সারসংক্ষেপ): আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: "আমার কাছে বুরাক আনা হল। এটি একটি সাদা জন্তু, খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড়। সে তার পা ফেলত দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমি এতে আরোহণ করলাম এবং বায়তুল মাকদিসে পৌঁছালাম"

➡️ এই হাদীসে ইসরা (রাতের সফর) এর বর্ণনা রয়েছে।

✅ সহিহ মুসলিম: হাদিস ১৬২

عن أنس بن مالك، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فُرِضَتْ عَلَيَّ الصَّلَوَاتُ خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ..."

বাংলা অনুবাদ (সারসংক্ষেপ): আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:“আমার উপর প্রথমে দিনে রাতে ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল... এরপর আমি ফিরে আসতে থাকলাম এবং শেষ পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারিত করা হয়, যা প্রতিটির প্রতিদান ১০ গুণ। ফলে তা ৫০-র সমান।”

➡️ এই হাদীসে মি‘রাজ ও সালাত ফরজ হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

Loading...