সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
নং আয়াতের তাফসীর

٣ - الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ
উচ্চারণ: আল্লাজিনা ইউমিনুনা বিল-গইবি ওয়া ইউকি-মু-নাস সলা-তা ওয়ামিম্মা রযাক্বনাহুম ইউংফিক্বুন
অনুবাদ: গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে (দানের মাধ্যমে) ব্যয় করে।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

الَّذِیۡنَ
"الَّذِیۡنَ" শব্দটি "যারা" বা "যাঁরা" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি বিশ্বাসী বা আল্লাহর পথে চলা ব্যক্তিদের নির্দেশ করে।

یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ
"یُؤۡمِنُوۡنَ" শব্দটি বিশ্বাস করা থেকে এসেছে, অর্থাৎ তারা বিশ্বাস রাখে।
"بِالۡغَیۡبِ" শব্দটি অদৃশ্য বা অদেখা জিনিসগুলোর প্রতি বিশ্বাস নির্দেশ করে।
এখানে "غَیۡب" দ্বারা আল্লাহ, আখিরাত, ফেরেশতা, ও অন্য অদৃশ্য জিনিসগুলো বোঝানো হচ্ছে।
অর্থাৎ, মুমিনরা অদৃশ্য বিশ্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখে, যা তাদের ঈমানের একটি মৌলিক অংশ।

وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ
"وَ" অর্থে "এবং"
"یُقِیۡمُوۡنَ" শব্দটি কায়েম করা বা প্রতিষ্ঠা করা থেকে এসেছে, যা নামাজ প্রতিষ্ঠা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, অর্থাৎ তারা নামাজ সঠিকভাবে এবং নিয়মিতভাবে আদায় করে।

وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ
"وَ" অর্থে "এবং"
"مِمَّا" শব্দটি "যা থেকে" নির্দেশ করে।
"رَزَقۡنٰهُمۡ" শব্দটি "আমরা তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে রিজিক বা উপার্জন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদানকৃত সম্পদ বোঝানো হয়েছে।
"یُنۡفِقُوۡنَ" শব্দটি "ব্যয় করা" বা "সদকা দেওয়া" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুমিনরা আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকের একটি অংশ দরিদ্র ও দরকারীদের কাছে দান করে।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের পরিচয় তুলে ধরেছেন এবং তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
অদৃশ্য বিশ্বাস—অর্থাৎ তারা আল্লাহ, আখিরাত, ফেরেশতা এবং অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটি তাদের ঈমানের একটি মৌলিক অংশ।
এছাড়া, তারা নামাজ কায়েম করে, অর্থাৎ নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলার জন্য চেষ্টা করে।
এছাড়া, তারা আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে দান করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দয়াশীলতার প্রকাশ।


আয়াতের শিক্ষা

বিশ্বাসে দৃঢ়তা: মুমিনদের প্রথম গুণ হচ্ছে তারা অদৃশ্য বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। এটি তাদের ঈমানকে মজবুত করে এবং তাদের ইসলামের প্রতি আনুগত্য তৈরি করে।
নামাজের গুরুত্ব: এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, নামাজ মুসলমানের জীবনের অপরিহার্য অংশ, যা ইবাদত ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।
দান ও সদকার উপকারিতা: রিজিক থেকে দান করা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ, যা তাদের আত্মবিশ্বাস, সহানুভূতি এবং সমাজের কল্যাণে সহায়তা করে।
আল্লাহর পথে চলার প্রমাণ: এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের মুমিন হওয়ার জন্য বিশ্বাস, নামাজ এবং দান তিনটি মৌলিক কর্ম রয়েছে, যা আল্লাহর رضا (খুশি) অর্জন করতে সাহায্য করে।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি সূরা আল-বাকারার প্রথম অংশ এবং এটি মূলত মক্কা এবং মদিনায় নাযিল হয়েছিল।
এটি মুসলমানদের জন্য একটি আদর্শ জীবনযাত্রার রূপরেখা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বাস, নামাজ এবং দান
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের ঈমান, ইবাদত ও সমাজসেবা সম্পর্কে পথনির্দেশনা প্রদান করেছেন।


তাফসীরে: