আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
● وَ الَّذِیۡنَ
"وَ الَّذِیۡنَ" শব্দটি "যারা" বা "যাঁরা" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি বিশ্বাসী বা আল্লাহর পথে চলা ব্যক্তিদের নির্দেশ করে।
● یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡكَ
"یُؤۡمِنُوۡنَ" শব্দটি বিশ্বাস করা থেকে এসেছে, অর্থাৎ তারা বিশ্বাস রাখে।
"بِمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡكَ" শব্দাংশটি "তোমার উপর অবতীর্ণ হওয়া" বা "তোমার উপর প্রেরিত" (কুরআন) নির্দেশ করে।
অর্থাৎ, মুমিনরা নবী মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ কুরআনে বিশ্বাস রাখে, যা তার মাধ্যমে আল্লাহ পাঠিয়েছেন।
● وَ مَاۤ أُنزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ
"وَ" অর্থে "এবং"।
"مَاۤ أُنزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ" শব্দাংশটি "তোমার পূর্বে (যে সব কিতাব বা গ্রন্থ) অবতীর্ণ হয়েছিল" নির্দেশ করে।
এখানে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল, সাবুর ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে।
● وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ
"وَ" অর্থে "এবং"।
"بِالۡاٰخِرَۃِ" শব্দটি আখিরাত (অর্থাৎ পরকাল) নির্দেশ করে, যেখানে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত, ও জাহান্নাম সম্পর্কিত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত।
"هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ" শব্দটি "তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুমিনরা আখিরাতের ব্যাপারে সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখে, এটি তাদের ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ।
এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের বিশ্বাসের গুণ বর্ণনা করেছেন। প্রথমত, তারা নবী মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ কুরআনে বিশ্বাস রাখে, যা তার মাধ্যমে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তারা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ (যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল, সাবুর) ও পূর্ববর্তী নবীদের উপদেশে বিশ্বাসী।
তৃতীয়ত, তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে, যে আখিরাতে তাদের কর্মের জন্য হিসাব হবে, এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঈমানের অংশ।
● বিশ্বাসের পূর্ণতা: এই আয়াতটি শেখায় যে, মুমিন হওয়া মানে শুধু কুরআনকেই বিশ্বাস করা নয়, বরং পূর্ববর্তী কিতাব ও নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।
● আখিরাতের গুরুত্ব: আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তার জীবন এবং কর্মকাণ্ডের দিশারী।
● বিভিন্ন কিতাবের প্রতি শ্রদ্ধা: মুসলমানদের জন্য কেবল কুরআন নয়, বরং পূর্ববর্তী কিতাবও আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস রাখা জরুরি।
● ঈমানের পরিপূর্ণতা: এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, একজন সঠিক মুমিনের ঈমান হতে হবে সম্পূর্ণ, সকল কিতাব ও নবীর প্রতি, যার মাধ্যমে ঈমানের মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এ আয়াতটি সূরা আল-বাক্বারায় রয়েছে এবং এটি মক্কা ও মদিনায় নাযিল হয়েছিল।
এটি বিশেষভাবে মুসলমানদেরকে সকল নবী ও কিতাবের প্রতি বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে নির্দেশ দেয়।
এটি নবী মুহাম্মদ (সঃ) এবং তার অনুসারীদের জন্য, যারা অন্য ধর্মগ্রন্থ এবং পূর্ববর্তী নবীদের উপর বিশ্বাস রাখে এমন একটি নির্দেশনা প্রদান করে, এবং একই সঙ্গে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব তুলে ধরে।