আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
بَلٰی
বরং
এটি পূর্ববর্তী অস্বীকারমূলক কথা (যেমন: "জাহান্নামে আমরা অল্পদিন থাকব") এর প্রত্যাখ্যান। আল্লাহ বলেন—না, বরং বাস্তবতা ভিন্ন।
مَنۡ كَسَبَ سَيِّئَةً
যে ব্যক্তি মন্দ কাজ অর্জন করে
যে ইচ্ছাকৃতভাবে গোনাহ করে, সৎকর্ম বর্জন করে এবং পাপকর্মে লিপ্ত থাকে, তার জন্য এই হুঁশিয়ারি।
وَّ أَحَاطَتْ بِهٖ خَطِيْٓـئَتُهٗ
এবং যার পাপ তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে
এটি এমন পাপ, যা মানুষের সমস্ত ভালোকে ঢেকে দেয়। সে এতটাই পাপাচারে লিপ্ত যে তার উপর গুনাহর প্রভাব চেপে বসে এবং তা তার চরিত্রকে ছায়াচ্ছন্ন করে ফেলে।
فَأُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ النَّارِ
তারা জাহান্নামের অধিবাসী
এ ধরনের ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে জাহান্নামের উপযুক্ত।
هُمْ فِيْهَا خٰلِدُوْنَ
তারা সেখানে চিরকাল থাকবে
যারা ঈমান ছাড়া মারা যায় এবং তাদের গুনাহ তাদেরকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে, তাদের জন্য জাহান্নাম হবে চিরস্থায়ী আবাস।
এই আয়াতে পূর্বের দাবিকে খণ্ডন করে বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। আল্লাহ স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে কেউ যদি গোনাহে ডুবে যায় এবং তার পাপ তাকে ঘিরে ফেলে, তবে সে জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবে। জাতি, বংশ বা অতীতের কোনো মর্যাদা তাকে রক্ষা করতে পারবে না। এটি আল্লাহর ন্যায়েরই প্রকাশ।
কেবল বংশ, জাতি বা ধর্মীয় পরিচয় নয়—কর্মের ভিত্তিতেই শাস্তি ও পুরস্কার নির্ধারিত হয়।
গোনাহ যদি একজন মানুষের সকল দিককে ঢেকে ফেলে, তবে তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য।
আল্লাহর দয়া বিস্তৃত হলেও জেনেশুনে পাপ করতে থাকা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সতর্ক থাকতে হবে যেন গুনাহ আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণ ঘিরে না ফেলে।
এই আয়াত পূর্ববর্তী ইহুদি সম্প্রদায়ের মিথ্যা দাবির খণ্ডন হিসেবে নাযিল হয়, যেখানে তারা বলত, “আমরা যতই গোনাহ করি, জাহান্নামে যাব কেবল অল্প সময়ের জন্য।” আল্লাহ তাদের মিথ্যা ধারণাকে ভেঙে দিয়ে বাস্তবতা তুলে ধরেন—যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে পাপের মধ্যে ডুবে যায়, তার জন্য কোনো ছাড় নেই।