সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৮ নং আয়াতের তাফসীর

١٨ - صُمٌّۢ بُکۡمٌ عُمۡیٌ فَهُمۡ لَا یَرۡجِعُوۡنَ
উচ্চারণ: সূম্মুম বূকমুন উমইউন ফাহুম লা-ইয়রজিউন
অনুবাদ: তারা বধির-মূক-অন্ধ। তাই তারা ফিরে আসবে না।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

صُمٌّۢ

– “বধির”
তারা এমন বধির যারা কুরআনের হিদায়াত, রাসূলের আহ্বান ও সত্যের বাণী শুনেও শুনতে চায় না। তারা কানে শোনার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আত্মিকভাবে বধির।

بُکۡمٌ

– “মূক”
তারা সত্য কথা উচ্চারণ করতে অক্ষম। তারা আল্লাহর দীন প্রচার তো করে না-ই, বরং সত্যকে গোপন করে, মিথ্যার পক্ষে কথা বলে অথবা চুপ থাকে।

عُمۡیٌ

– “অন্ধ”
তাদের দৃষ্টিশক্তি আছে, কিন্তু তারা সত্যকে দেখতে ও বুঝতে চায় না। তারা হিদায়াতের আলো উপেক্ষা করে, অন্তরের অন্ধকারে পড়ে থাকে।

فَهُمۡ لَا یَرۡجِعُوۡنَ

– “তারা ফিরে আসে না”
তারা সত্যের পথে ফিরতে চায় না। অন্তর মোহর করে দেওয়া হয়েছে, তাই তারা গোমরাহিতেই অটল থাকে এবং তাওবার দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে মুনাফিকদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তারা বধির, মূক এবং অন্ধ—তারা শোনে না, বলে না, দেখে না। বাস্তবে তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থ, কিন্তু হিদায়াত গ্রহণের জন্য আত্মিকভাবে তারা অসাড়। এইসব লোকেরা সত্য জানার, মানার বা অনুসরণ করার কোনো আগ্রহ রাখে না। তাই তারা হিদায়াতের পথে ফিরে আসে না।


আয়াতের শিক্ষা

● সত্য প্রত্যাখ্যান করলে মানুষ আত্মিকভাবে বধির, মূক ও অন্ধ হয়ে যায়।
● আল্লাহর হিদায়াত শোনার, বলার এবং দেখার মানসিকতা না থাকলে, হিদায়াত অর্জন করা অসম্ভব।
● হিদায়াতের দরজা সবার জন্য খোলা, কিন্তু যারা তা স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দেয়, তারা আর ফিরে আসে না।
● আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতাগুলো (শ্রবণ, বাক, দৃষ্টি) ব্যবহার না করলে, সেগুলো আত্মিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
● মুনাফিকদের অবস্থা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, যেন আমরা অন্তর থেকে ঈমান ধারণ করি।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয় এবং মুনাফিকদের অন্তরগত অবস্থার বর্ণনা দেয়। তারা বাহ্যিকভাবে মুসলমান ছিল, কিন্তু তাদের অন্তরে ছিল বিশ্বাসহীনতা। তারা হিদায়াতের কথা শুনেও আমল করতো না, সত্যকে প্রচার করতো না, এবং আলোর পথ থেকে সরে থাকতো। এজন্যই তাদেরকে বধির, মূক ও অন্ধ বলে রূপকভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই আয়াত তাদের চিরকালীন গোমরাহির ইঙ্গিত দেয়।


তাফসীরে: