আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে — সাহাবায়ে কিরাম মদের ও জুয়ার বিধান জানতে চেয়েছিলেন; কারণ তখনো অনেকেই এই কাজে লিপ্ত ছিলেন।
قُلۡ فِیۡهِمَاۤ اِثۡمٌ کَبِیۡرٌ
বল, এ দুটিতে রয়েছে মহাপাপ — অর্থাৎ উভয়ই গুনাহর বড় উৎস, যা মানুষের বিবেক ও সমাজ ধ্বংস করে।
وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ
এবং এতে কিছু উপকারও রয়েছে — যেমন মদের ব্যবসা, তাৎক্ষণিক আনন্দ, অথবা জুয়ার মাধ্যমে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা।
وَ اِثۡمُهُمَاۤ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِهِمَا
কিন্তু তাদের পাপ তাদের উপকার অপেক্ষা বড় — এই আয়াত মদ ও জুয়া হারাম ঘোষণার সূচনা এবং তাদের ক্ষতিকরতা সুস্পষ্ট করে।
وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ
আর তারা জিজ্ঞাসা করে, কী ব্যয় করবে? — এখানে অর্থ-সম্পদ ব্যয়ের ব্যাপারে তারা নবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন।
قُلِ الۡعَفۡوَ
বলো, প্রয়োজন অতিরিক্ত যা রয়েছে — আল্লাহ নির্দেশ দেন যে, মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে, তা ব্যয় করা উচিত।
کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ
এইভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন — যেন জীবনব্যবস্থা স্পষ্ট হয়।
لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ
যাতে তোমরা চিন্তা করো — সমাজ, জীবন, পাপ ও কল্যাণের বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে শেখো।
এই আয়াত ইসলামি সমাজ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে অবতীর্ণ হয়। তাতে মদ ও জুয়ার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলা হয় যে এগুলোতে কিছু দুনিয়াবি উপকার থাকলেও এগুলোর ক্ষতি বেশি। পরে এ দুটিকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়। একইসাথে এই আয়াত মানুষের ব্যয়-সংক্রান্ত জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়—প্রয়োজন অতিরিক্ত যা থাকে, তাই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো। এভাবেই ইসলামী সমাজে ব্যয়সংস্কৃতি, ন্যায়বোধ ও পবিত্রতা কায়েম হয়।
মদ ও জুয়া ইসলামে গুরুতর পাপ।
সামান্য উপকার থাকলেও পাপ বেশি হলে তা বর্জনীয়।
ইসলামে ব্যয় করতে বলা হয়েছে ‘প্রয়োজন অতিরিক্ত’ অংশ থেকে।
চিন্তা ও বিবেককে সচল রাখা ইসলামি শিক্ষার একটি স্তম্ভ।
আয়াতের ব্যাখ্যার মাধ্যমে জীবনের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
মদ ও জুয়া সে যুগে আরব সমাজে খুবই প্রচলিত ছিল। সাহাবীরা জানতে চেয়েছিলেন ইসলামে এর অবস্থান। এই আয়াত তারই জবাব হিসেবে প্রথম ধাপে মদ ও জুয়ার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে। এরপর পর্যায়ক্রমে এগুলো সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হয়।