সূরা: ৯. আত-তাওবা (التَّوْبَةِ)
১৩ নং আয়াতের তাফসীর

١٣ - اَلَا تُقَاتِلُوۡنَ قَوۡمًا نَّکَثُوۡۤا اَیۡمَانَهُمۡ وَ هَمُّوۡا بِاِخۡرَاجِ الرَّسُوۡلِ وَ هُمۡ بَدَءُوۡکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ ؕ اَتَخۡشَوۡنَهُمۡ ۚ فَاللّٰهُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشَوۡهُ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
উচ্চারণ: আলা তুকাতিলুনা কওমান নাকাছু আইমানাহুম ওয়া হাম্মু বিখরজির রসূলি ওয়্হুম বদাউকুম আওয়ালা মাররতিন, আতাখশাওনাহুম, ফাল্লাহু আহাক্কু আংতাখশাওহু ইং কুংতুম মুমিনীন।
অনুবাদ: তোমরা কেন এমন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর না, যারা তাদের কসম ভঙ্গ করেছে এবং রাসূলকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে, আর তারাই প্রথমে তোমাদের সাথে আরম্ভ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় করছ? অথচ আল্লাহ অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হও।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا
– কেন তোমরা লড়াই করছো এক জাতির সাথে: এখানে আল্লাহ মুসলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করছেন, কেন তারা নিজেদের ইমান ও ধর্মের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভয় পাচ্ছে। এই প্রশ্নের মাধ্যমে তাদেরকে অবহিত করা হচ্ছে যে, তারা এই লড়াইয়ে যথেষ্ট অধিকারী এবং তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

نَّكَثُواۤ أَيْمَانَهُمْ
– যারা তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে: তারা ঐ জাতি, যারা ইসলামের সাথে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে, অর্থাৎ তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা ভঙ্গ করেছে এবং ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ
– এবং যারা রাসূলকে বহিষ্কার করার চেষ্টা করেছে: মুশরিকরা, যারা রাসূল ﷺ-কে মক্কা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই এই নির্দেশ ছিল।

وَهُمْ بَدَأُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ
– এবং যারা প্রথমবার তোমাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল: এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, তারা প্রথম থেকেই মুসলিমদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল, তাই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ফরজ।

أَتَخْشَوْنَهُمْ
– তোমরা কি তাদের ভয় করো?: এখানে প্রশ্ন করা হচ্ছে, মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা কেন ভয় পাচ্ছে, যাদের আচরণ ইসলামের শত্রুতা ও অস্বীকারের দিকে?

فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ
– আল্লাহ তা'আলা আরো অধিক হকদার যে, তোমরা তাঁকে ভয় করো: আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, মুসলিমদের আসল ভয় আল্লাহকেই করা উচিত, না যে তাদের শত্রুদেরকে।

إِن كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ
– যদি তোমরা বিশ্বাসী হও: এটা একটি শর্ত হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, যদি তারা সত্যিকারভাবে বিশ্বাসী হয়, তবে তাদেরকে আল্লাহকে ভয় করতে হবে, শত্রুদের নয়।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদেরকে সতর্ক করছেন যে, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত এবং তাদের ভয় করা উচিত নয়। বিশেষত, যারা তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে, রাসূল ﷺ-কে মক্কা থেকে বের করতে চেয়েছে এবং প্রথমবার মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ফরজ, এবং মুসলিমদের উচিত আল্লাহর ভয়কে নিজেদের মধ্যে প্রধান রাখার চেষ্টা করা। যারা সত্যিকারভাবে বিশ্বাসী, তারা অবশ্যই আল্লাহকেই ভয় করবে, শত্রুদের নয়।


আয়াতের শিক্ষা

  1. মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইমানের অংশ, এবং তাদেরকে ভয় না করে আল্লাহকে ভয় করতে হবে।

  2. প্রথমবার যারা আক্রমণ করেছে এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

  3. আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তাদের শত্রুদের নয়, বরং তাঁরই ভয় করা উচিত।

  4. যারা বিশ্বাসী, তারা সবসময় আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে এবং তাঁর কাছ থেকে সাহস ও শক্তি গ্রহণ করবে।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াত মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে প্রতিরোধের জন্য নাযিল হয়েছিল, যারা প্রথমবার মদিনায় মুসলিমদের প্রতি আক্রমণ করেছিল এবং তাদের ধর্মের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেছিল। আল্লাহ তাদেরকে এই প্রশ্নের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছেন, যাতে তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে সঠিক পথে লড়াই করতে পারে।


তাফসীরে:

পূর্বের আয়াত পরবর্তী আয়াত