সূরা: ৯. আত-তাওবা (التَّوْبَةِ)
নং আয়াতের তাফসীর

٣ - وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَی النَّاسِ یَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَکۡبَرِ اَنَّ اللّٰهَ بَرِیۡٓءٌ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ۬ۙ وَ رَسُوۡلُهٗ ؕ فَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ غَیۡرُ مُعۡجِزِی اللّٰهِ ؕ وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ
উচ্চারণ: ওয়া আজানুম মিনাল্লাহি ওরসূলিহি ইলান-নাসি ইয়াওমাল-হাজ্জিল আকবার, আন্নাল্লহা বারি’উম মিনাল-মুশরিকীনা, ওয়া রাসূলুহ্। ফা-ইন তুবতুম ফাহুয়া খইরুল্লাকুম। ওয়া ইন তাওল্লাইতুম ফাআ’লামু আন্নাকুম গইরু মু‘জিযিল্লাহ। ওয়া বাশ্‌শিরিল্লাযীনা কাফারু বিআ‘যাবিন আলীম।
অনুবাদ: আর মহান হজ্জের দিন* মানুষের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা, নিশ্চয় আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও। অতএব, যদি তোমরা তাওবা কর, তাহলে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর যদি তোমরা ফিরে যাও, তাহলে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। আর যারা কুফরী করেছে, তাদের তুমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖۤ“এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা” – এখানে আল্লাহ ও রাসূল একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা সরাসরি সকল মানুষের উদ্দেশে পৌঁছে দিচ্ছেন। এটি একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মর্যাদা পাচ্ছে।

اِلَی النَّاسِ یَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَکۡبَرِ“মানবজাতির প্রতি, বৃহৎ হজের দিনে” – হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন, আরাফার দিন অথবা ঈদের দিন (মতভেদ আছে), যেদিন মুশরিকদের মাঝে এই ঘোষণা পৌঁছে দেওয়া হয় যেন তারা সরাসরি সতর্ক হয়।

اَنَّ اللّٰهَ بَرِیۡٓءٌ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ۬ۙ وَ رَسُوۡلُهٗ“নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুশরিকদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না” – অর্থাৎ, ইসলাম আর মুশরিকদের সাথে একত্র অবস্থান করতে পারবে না। চুক্তিগুলো বাতিল, এবং ইসলাম পরিস্কারভাবে তাদের থেকে পৃথক।

فَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ“তবে যদি তোমরা তওবা করো, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম” – আল্লাহ এখানে তাওবার জন্য সুযোগ রাখছেন। যারা মুশরিক ছিল, তাদের জন্য ইসলাম গ্রহণ করে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

وَ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ غَیۡرُ مُعۡجِزِی اللّٰهِ“আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারবে না” – যদি তারা তওবা না করে, বরং ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে আল্লাহর হাত থেকে রেহাই নেই।

وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ“আর কাফিরদের জন্য শোনাও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ” – যারা তাওবা না করে কুফরে অব্যাহত থাকে, তাদের জন্য যন্ত্রণাময় আযাব প্রস্তুত আছে।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে হজ্বের দিনে সরাসরি এক ঘোষণার মাধ্যমে মুশরিকদের প্রতি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মুসলমানদের সাথে তাদের আর কোনো সম্পর্ক বা চুক্তি নেই। একইসাথে আল্লাহ তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের শেষ সুযোগ দিচ্ছেন। আর যারা ফিরিয়ে দেবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির বার্তা।


আয়াতের শিক্ষা

  1. ইসলাম কোনও ধোঁকার ভিত্তিতে চুক্তি মেনে চলে না—যারা চুক্তিভঙ্গ করে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।

  2. আল্লাহ সবসময় তওবার সুযোগ দেন, কিন্তু নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে।

  3. কাফিরদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও কঠিন পরিণতি রয়েছে।

  4. ধর্মীয় ঘোষণা ও নির্দেশনা স্পষ্ট এবং জনসমক্ষে প্রচারযোগ্য হওয়া উচিত।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি সূরা আত-তাওবার শুরুতে নাযিল হয়েছে। নবম হিজরীতে যখন ‘হজ্জুল আকবার’ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হজে যাননি। তিনি আবু বকর (রাঃ)-কে আমীরুল হাজ বানিয়ে পাঠান, এবং এই আয়াতসহ প্রথম দশ আয়াত ঘোষণা দেওয়ার দায়িত্ব দেন আলী (রাঃ)-কে। তিনি মিনার দিন মুশরিকদের মাঝে এই আয়াতগুলো জনসমক্ষে পাঠ করেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে পুরাতন চুক্তিগুলো বাতিল করা হয় এবং মুশরিকদের জন্য ইসলাম গ্রহণ না করলে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।


তাফসীরে:

পূর্বের আয়াত পরবর্তী আয়াত