● اِلَّا الَّذِیۡنَ عٰهَدۡتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ – “তবে তাদের ব্যতিক্রম, যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তি করেছো মুশরিকদের মধ্য থেকে” – অর্থাৎ কিছু মুশরিক ছিল যারা রাসূল (সা.)-এর সাথে সত্যিকার অর্থে চুক্তি করেছিল এবং তা রক্ষা করেছিল। তাদের প্রতি অবিচার নয়, বরং ন্যায়বিচার ও সততা দেখাতে বলা হচ্ছে।
● ثُمَّ لَمۡ یَنۡقُصُوۡکُمۡ شَیۡئًا – “অতঃপর তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিছুই কমতি করেনি” – মানে তারা কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেনি বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি।
● وَّ لَمۡ یُظَاهِرُوۡا عَلَیۡکُمۡ اَحَدًا – “এবং তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সহায়তা করেনি” – অর্থাৎ তারা শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলিমদের ক্ষতি করার চেষ্টাও করেনি।
● فَاَتِمُّوۡۤا اِلَیۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ اِلٰی مُدَّتِهِمۡ – “সুতরাং নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে চুক্তি পূর্ণ করো” – যেহেতু তারা চুক্তি রক্ষা করেছে, তাই তাদের প্রতি চুক্তিভঙ্গ করা যাবে না। ইসলামে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।
● اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَّقِیۡنَ – “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন” – যারা আল্লাহভীরু, যারা প্রতিশ্রুতি পালন করে, সংযমী, সুবিবেচক ও ইনসাফপূর্ণ, তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা রয়েছে।
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছেন, ইসলাম চুক্তিভঙ্গকে সমর্থন করে না। যদিও পূর্ববর্তী আয়াতে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা ছিল মুশরিকদের জন্য, কিন্তু যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, তাদের প্রতি চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত ন্যায়বিচার ও বিশ্বস্ততা অব্যাহত রাখতে হবে। এটাই মুত্তাকী বা আল্লাহভীরুদের গুণ।
ইসলাম সবসময় চুক্তি ও প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
যারা প্রতারণা করেনি, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার দেখাতে হবে—even যদি তারা মুসলিম না হয়।
আল্লাহ মুত্তাকী, ইনসাফপন্থী ও বিশ্বস্ত বান্দাদের ভালোবাসেন।
রাজনৈতিক বা সামাজিক দ্বন্দ্বে সীমারেখা টানতে হলেও ন্যায়ের সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
এই আয়াত নাযিল হয় সূরা আত-তাওবারের শুরুতেই, যখন মুশরিকদের সঙ্গে পূর্ববর্তী সকল চুক্তি বাতিলের ঘোষণা আসে। কিন্তু এমন কিছু মুশরিক গোত্র ছিল যারা চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তারা কখনও চুক্তিভঙ্গ করেনি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুকে সহায়তা করেনি। এদের প্রতি ইসলামের নির্দেশ ছিল—তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হোক। এই আয়াত সেই নীতিগত ব্যতিক্রম নির্ধারণ করছে।