সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৫ নং আয়াতের তাফসীর

١٥ - اَللّٰهُ یَسۡتَهۡزِئُ بِهِمۡ وَ یَمُدُّهُمۡ فِیۡ طُغۡیَانِهِمۡ یَعۡمَهُوۡنَ
উচ্চারণ: আল্লাহু ইয়াছতাহযীউ বিহিম ওয়া ইয়ামুদ্দুহুম ফি তুগয়া-নিহিম ইয়া’মাহূ-ন।
অনুবাদ: আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

اللّٰهُ یَسۡتَهۡزِئُ بِهِمۡ
– "আল্লাহ তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করেন":
এখানে “ইস্তিহ্‌জা” (استہزاء) অর্থে ঠাট্টা বা উপহাস বোঝানো হয়েছে।
কিন্তু আল্লাহ তাআলার জন্য এই শব্দের অর্থ মানবিক উপহাসের মতো নয়; বরং এর অর্থ হলো:
আল্লাহ তাদের কপটতা ও মুনাফিকির জবাব এমনভাবে দেন যা তাদের নিজেদের জন্য ক্ষতিকর, এবং যার পরিণতি ধ্বংস।
তারা যেমন ঈমানদারদের সাথে ঠাট্টা করে, আল্লাহও তাদের মক্কার জবাব দেন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে।

وَ یَمُدُّهُمۡ
– "এবং তিনি তাদেরকে অবকাশ দেন":
এখানে "يَمُدُّ" অর্থাৎ টেনে নেওয়া বা বাড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে সময় দেন, যাতে তারা আরও গোমরাহি ও পাপের মধ্যে প্রবেশ করে।

فِیۡ طُغۡیَانِهِمۡ
– "তাদের সীমালঙ্ঘনের মধ্যে":
“طُغْيَان” মানে সীমা অতিক্রম করা, অবাধ্যতা, অহংকার।
আল্লাহ তাদেরকে সেই অবাধ্যতার মধ্যে থাকতে দেন যেটা তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছে।

یَعۡمَهُوۡنَ
– "তারা দিকহারা হয়ে থাকে":
এই শব্দের অর্থ হলো বিভ্রান্তভাবে ঘুরপাক খাওয়া, যেন এক অন্ধ লোক বিভ্রান্ত হয়ে পথ খুঁজে না পায়।
তারা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে অক্ষম হয়ে যায়।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতটি মুনাফিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
তারা মুখে বলত “আমরা ঈমান এনেছি”, কিন্তু অন্তরে ছিল কপটতা, বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস।
তারা ঈমানদারদের সাথে উপহাস করত, এবং মনে করত তারা খুব চতুর।
আল্লাহ বলেন—তাঁর প্রতিক্রিয়া হলো ন্যায়বিচারমূলক ‘উপহাস’, যা তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
তাদেরকে সময় দেওয়া হয়, যেন তারা নিজেরাই নিজেদের গোমরাহির গভীরে তলিয়ে যায়।
তারা নিজেরাই বুঝে না, তারা অন্ধ ও বিভ্রান্ত।


আয়াতের শিক্ষা

● মুনাফিকি একটি মারাত্মক রোগ, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
● আল্লাহ মানুষের ভিতরের অবস্থাও জানেন—শুধু মুখের কথায় সন্তুষ্ট হন না।
● কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে লুকিয়ে রাখে, আল্লাহ তাকে ধীরে ধীরে তার গোমরাহির মধ্যে ফেলে দেন।
● আল্লাহর দেয়া অবকাশ কখনো করুণা নয়, এটা পরীক্ষাও হতে পারে।
● যারা ঠাট্টা করে ঈমানদারদের বা দ্বীনের বিষয় নিয়ে, তাদের জন্য আল্লাহর জবাবও যথাযথ হয়।
● মুনাফিকরা নিজেরাই বুঝতে পারে না, তারা কতটা বিভ্রান্ত।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি সূরা বাকারা’র সেই অংশে নাযিল হয়েছে, যেখানে মুনাফিকদের চরিত্র ও পরিণাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মদীনায় কিছু লোক ছিল যারা বাহ্যিকভাবে মুসলমান সেজে থাকত, কিন্তু ভিতরে ছিল দ্বীনের বিরোধী।
তারা মুসলমানদের সাথে ঠাট্টা করত, এবং নিজেদেরকে চতুর ও বুদ্ধিমান ভাবত।
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন—তাদের এই ‘চতুরতা’ আসলে তাদের ধ্বংসের পথ।
আল্লাহ তাদের পাপের রজ্জু দীর্ঘ করেন, যাতে তারা সম্পূর্ণভাবে গোমরাহিতে নিমজ্জিত হয়।


তাফসীরে: