সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৪ নং আয়াতের তাফসীর

١٤ - وَ اِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚۖ وَ اِذَا خَلَوۡا اِلٰی شَیٰطِیۡنِهِمۡ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مَعَکُمۡ ۙ اِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَهۡزِءُوۡنَ
উচ্চারণ: ওয় ইযা লাক্বুল্লাযীনা আমানু কলু আমান্না, ওয় ইযা খলাও ইলা শায়াতী-নিহিম কলু ইন্না-মাআকুম, ইনামা-নাহনু মুস্তাহযিউ-ন।
অনুবাদ: আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল মুমিনদের সাথে উপহাসকারী’।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

وَ اِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا
"وَ" অর্থে এবং,
"إِذَا" অর্থে যখন,
"لَقُوا" অর্থে তারা সাক্ষাৎ করে,
"الَّذِیۡنَ" অর্থে যারা,
"اٰمَنُوۡا" অর্থে বিশ্বাস করেছে
এখানে বলা হচ্ছে যে, যখন মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে দেখা করে, তারা নিজেদের ঈমানের দাবি করে।

قَالُوۡۤا اٰمَنَّا
"قَالُوۡۤا" অর্থে তারা বলে,
"اٰمَنَّا" অর্থে আমরা ঈমান এনেছি
মুনাফিকরা মোমিনদের সামনে নিজেদেরকে বিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করে।

وَ اِذَا خَلَوۡا اِلٰی شَیٰطِیۡنِهِمۡ
"وَ" অর্থে এবং,
"إِذَا" অর্থে যখন,
"خَلَوۡا" অর্থে তারা একা হয়ে যায়,
"إِلٰی" অর্থে প্রতি,
"شَیٰطِیۡنِهِمۡ" অর্থে তাদের শয়তানদের সাথে
এখানে বলা হচ্ছে, যখন মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে থাকার পরে একা হয়ে যায়, তারা শয়তানদের সাথে আলোচনা করে।

قَالُوۡۤا اِنَّا مَعَکُمۡ
"قَالُوۡۤا" অর্থে তারা বলে,
"إِنَّا" অর্থে নিশ্চয়ই আমরা,
"مَعَکُمۡ" অর্থে তোমাদের সাথে
এখানে তারা তাদের শয়তানদের কাছে নিজেদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে বলে প্রকাশ পায়।

إِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَهۡزِءُوۡنَ
"إِنَّمَا" অর্থে নিশ্চয়ই,
"نَحۡنُ" অর্থে আমরা,
"مُسۡتَهۡزِءُوۡنَ" অর্থে মজা করছি বা তাচ্ছিল্য করছি
এখানে মুনাফিকরা বলছে যে তারা শুধু মজা করছে এবং মুমিনদের সাথে মস্করা করছে।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এ আয়াতে মুনাফিকদের দ্বিচারিতা প্রকাশ করা হয়েছে। তারা মুমিনদের সামনে ঈমানের দাবি করে এবং তাদেরকে বিশ্বাসী বলে উপস্থাপন করে, কিন্তু যখন মুমিনদের সান্নিধ্য থেকে সরে যায়, তখন তারা নিজেদের আসল মনোভাব প্রকাশ করে। তারা নিজেদের শয়তানদের সাথে একে অপরের সঙ্গে মজা করে এবং মুমিনদের সাথে যে কিছুই করে না, তা নিয়ে হাস্যকর অবস্থান নেয়। তারা বিশ্বাস করে না, কিন্তু তাদের দ্বিচারিতা মুমিনদের সামনে অন্যভাবে উপস্থাপন করে, যাতে তাদের পরিচিতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এটি একটি অত্যন্ত স্পষ্ট উদাহরণ দেয় যে মুনাফিকদের মধ্যে যে দ্বিচারিতা ছিল, তা কেবল মুমিনদের উপকারের জন্য নয় বরং নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ছিল।


আয়াতের শিক্ষা

দ্বিচারিতা থেকে দূরে থাকা: এই আয়াত আমাদের শেখায় যে আমাদের আন্তরিকতা এবং ঈমানকে সঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত। দ্বিচারিতায় পতিত হওয়া মুমিনের জন্য অগ্রহণযোগ্য।

ঈমানের শক্তি: মুমিনদের ঈমানের প্রকৃত শক্তি সঠিক বিশ্বাস ও কর্মে প্রকাশিত হওয়া উচিত। মুনাফিকরা নিজেদের আস্থা ও বিশ্বাসের উপর কোনো স্থিরতা রাখে না।

শয়তান থেকে সতর্কতা: শয়তানের প্রভাবে যারা চলে, তারা জীবনে দুটো দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। তাদের শয়তানদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে মুমিনদের সাথে মিষ্টি কথা বলার মাধ্যমে দ্বিচারিতা প্রদর্শন করা হয়।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এ আয়াতটি মুনাফিকদের প্রতি নাযিল হয়েছে, যারা ইসলামের সাথে তাচ্ছিল্য করতো, এবং নিজেদের মধ্যে একে অপরকে ঠকিয়ে চলত। তারা মুসলিমদের সাথে ঈমানের দাবি করতো, কিন্তু তাদের আসল মনোভাব শয়তানের প্রভাবে দৃশ্যমান হতো। এটি তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং দ্বিচারিতার প্রকাশ। আল্লাহ তাদের আসল অবস্থা পরিষ্কার করেছেন।


তাফসীরে: