আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
اَلشَّهۡرُ الۡحَرَامُ بِالشَّهۡرِ الۡحَرَامِ
সম্মানিত মাসের প্রতিশোধ সম্মানিত মাসেই হবে — চারটি পবিত্র মাসের (যেমন: মুহাররম, রজব, জিলক্বদ, জিলহজ্জ) মধ্যে যুদ্ধ করা সাধারণত নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু যদি শত্রু সম্মানিত মাসে যুদ্ধ শুরু করে, তখন সেই একই মাসে প্রতিশোধ নেওয়া বৈধ।
وَ الۡحُرُمٰتُ قِصَاصٌ
পবিত্রতার প্রতিশোধ দেওয়া যাবে — যারা পবিত্রতা ভঙ্গ করে অন্যায় করে, তাদের বিরুদ্ধে ন্যায্যভাবে প্রতিরোধ করা যাবে। এখানে 'হুরুমাত' বলতে সম্মানিত বিষয়, সময়, স্থান বা অবস্থাকে বোঝায়।
فَمَنِ اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ
অতএব, কেউ তোমাদের উপর জুলুম করলে — কেউ যদি অন্যায়ভাবে মুসলমানদের উপর আক্রমণ বা অত্যাচার চালায়, তাদের শান্তিতে না রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি রয়েছে।
فَاعۡتَدُوۡا عَلَیۡهِ بِمِثۡلِ مَا اعۡتَدٰی عَلَیۡکُمۡ
তোমরাও তার উপর জুলুম করো যেমনভাবে সে তোমাদের উপর করেছে — ইসলাম প্রতিশোধে সীমালঙ্ঘন নিষেধ করে। সমপরিমাণ জবাব দিতে বলা হয়েছে, বেশি নয়। প্রতিশোধ নিতে হলেও তা হবে ন্যায়সঙ্গত ও সমানুপাতিক।
وَ اتَّقُوا اللّٰهَ
তবে আল্লাহকে ভয় করো — প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করো না। আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে সংযত থেকো।
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ
এবং জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গেই আছেন — যারা সংযম পালন করে, সীমা মানে এবং আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন এবং তাদের সঙ্গে থাকেন।
এই আয়াতে প্রতিরোধ, প্রতিশোধ ও সংযমের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বর্ণিত হয়েছে। ইসলামে কোনো অন্যায়ের জবাবে জবাব দেওয়া বৈধ, তবে সীমার মধ্যে থেকে। সম্মানিত মাসে যুদ্ধ সাধারনত নিষিদ্ধ হলেও, যদি শত্রুপক্ষ সেই মাসেই যুদ্ধ করে, তখন মুসলমানদেরকে আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। একইসাথে, আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিশোধ ন্যায়সঙ্গত থাকে এবং সীমা না ছাড়ায়। এটি ইসলামী ন্যায়ের চমৎকার উদাহরণ।
আত্মরক্ষা ও প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি ইসলামে রয়েছে, তবে তা সীমার মধ্যে।
শত্রু সম্মান না রাখলে, মুসলমানদেরও আত্মরক্ষা বৈধ হয়—even in sacred months.
প্রতিটি প্রতিশোধ হতে হবে সমপর্যায়ের, সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
আল্লাহভীতি ও সংযমই আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার মূল উপায়।
ইসলাম ন্যায় ও ভারসাম্যের ধর্ম, যেখানে প্রতিরোধ ও দয়া উভয়টাই স্থান পায়।
এই আয়াতটি মুসলমানদেরকে সেই পরিস্থিতিতে নির্দেশ দেয়, যখন মুশরিকরা সম্মানিত মাসে যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং মুসলমানরা কি করবে তা নিয়ে দোটানায় ছিল। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, মুসলমানরা আগে সম্মানিত মাসে যুদ্ধ করত না, কিন্তু যখন শত্রুপক্ষ এই নিয়ম ভঙ্গ করলো, তখন আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিলেন—তোমরাও প্রতিশোধ নিতে পারো, তবে সমান মাত্রায় এবং আল্লাহভীতির সঙ্গে।