আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ قٰتِلُوۡهُمۡ
তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো — "ক্বাতিলূহুম" শব্দটি নির্দেশবাচক (Imperative), অর্থাৎ মুসলিমদেরকে মুশরিক ও দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, যারা সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
حَتّٰی لَا تَکُوۡنَ فِتۡنَۃٌ
যতক্ষণ না ফিতনা থাকে না — "ফিতনা" শব্দটি এখানে দ্বীন পালনে বাধা, অত্যাচার, বা কুফরি প্রভাব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, মুসলমানরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে, সেই পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
وَّ یَکُوۡنَ الدِّیۡنُ لِلّٰهِ
এবং আল্লাহরই জন্য দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয় — দ্বীন বা ধর্মের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব যেন শুধু আল্লাহর হয় এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী সমাজ চলে, সেই লক্ষ্যেই এই নির্দেশ।
فَاِنِ انۡتَهَوۡا
অতএব, যদি তারা বিরত হয় — যদি তারা কুফরি, দমন-পীড়ন ও আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে সরে আসে এবং ইসলাম মেনে নেয় বা শান্তিতে চলে আসে।
فَلَا عُدۡوَانَ
তবে আক্রমণ বৈধ নয় — অর্থাৎ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া বৈধ নয়, কারণ মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিতনার অবসান ও দ্বীনের প্রতিষ্ঠা।
اِلَّا عَلَی الظّٰلِمِیۡنَ
জুলুমকারীদের উপর ব্যতীত — যদি কেউ অন্যায়ভাবে জুলুম করে যায়, ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করে, শুধু তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ বৈধ থাকবে।
এই আয়াতে ইসলামের জিহাদ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বর্ণিত হয়েছে। ইসলাম যুদ্ধকে উৎসাহিত করে না, বরং ফিতনা, দমন-পীড়ন ও দ্বীনের পথে বাধা দূর করার জন্যই যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছে। যখন এসব ফিতনার অবসান ঘটে এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন যুদ্ধ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ইসলাম ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যুদ্ধও ন্যায়ের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি মুসলিমদেরকে দায়িত্বশীলভাবে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়, যেন তা নিপীড়নের হাতিয়ার না হয়।
যুদ্ধ শুধুমাত্র ফিতনা বা দমন-পীড়ন রোধ এবং দ্বীনের প্রতিষ্ঠার জন্যই বৈধ।
ইসলাম যুদ্ধকে সীমাবদ্ধ করেছে—যে কোনো সাধারণ বা নির্বিচার যুদ্ধ বৈধ নয়।
শান্তি ফিরে এলে যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়, এটি ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।
জুলুমকারী ছাড়া কাউকে আক্রমণ করা ইসলামে অনুমোদিত নয়।
ইসলাম শান্তি ও ইনসাফের ধর্ম।
এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মক্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে। তারা মুসলমানদের উপর দীর্ঘদিন নির্যাতন করেছিল, মসজিদুল হারাম থেকে বিতাড়িত করেছিল, এবং ইসলামের দাওয়াত বন্ধ করার জন্য সবরকম কৌশল প্রয়োগ করেছিল। এই আয়াত মুসলমানদেরকে তাদের আত্মরক্ষার অধিকার এবং দ্বীনের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়। তবে, একইসাথে সীমা নির্ধারণ করে দেয়—শুধু জুলুমকারীদের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ বৈধ।