আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো — এখানে আল্লাহর পথে ব্যয় বলতে জিহাদ, ইসলামী দাওয়াহ, দরিদ্র-মিসকিনদের সাহায্য, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ইত্যাদিতে খরচ করাকে বোঝানো হয়েছে। এটি মুসলমানদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّهۡلُکَۃِ
নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না — অর্থাৎ আল্লাহর পথে ব্যয় না করে, দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে, কিংবা অন্যায়ভাবে জীবনযাপন করে নিজের জীবনকে সংকটে ফেলো না। এটি আত্মবিনাশ, দুর্বলতা বা ধর্মীয় দায়িত্ব অবহেলার প্রতি সতর্কতা।
وَ اَحۡسِنُوۡا
আর উত্তম কাজ করো — উত্তম কাজের মধ্যে রয়েছে ভালো ব্যবহার, সদাচরণ, ইনসাফ, ও কল্যাণকর কাজ করা। শুধু দায়িত্ব পালন নয়, তা সুন্দরভাবে করা গুরুত্বপূর্ণ।
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন — যারা শুধু ফরজ কাজেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ইখলাস ও সৌন্দর্যের সাথে কাজ করে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।
এই আয়াত মুসলমানদেরকে ইসলামের পথে জান-মাল উৎসর্গ করতে উৎসাহিত করে। কোনো দ্বিধা বা ভীতি যেন বাধা না হয়। যদি কেউ আল্লাহর পথে ব্যয় না করে, তাহলে তা নিজেরই ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই আয়াত মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে—সাহস, আত্মত্যাগ ও ইহসানের সাথে কাজ করতে। ইসলাম শুধু দায়িত্ব পালনের নয়, বরং তা সুন্দরভাবে করার আদর্শও দেয়।
আল্লাহর পথে ব্যয় করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।
দায়িত্ব অবহেলা ও নির্লিপ্ততা আত্মবিনাশের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
উত্তমভাবে কাজ করা এবং সৌন্দর্যের সাথে দায়িত্ব পালন আল্লাহর কাছে প্রিয়।
আল্লাহ সেই মানুষদের ভালোবাসেন, যারা সদাচরণ করে, দান করে, এবং ন্যায়ের সাথে চলে।
জিহাদ বা সেবামূলক কাজে ব্যয় না করে বসে থাকাও ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
এই আয়াতটি সূরা আল-বাকারা-এর ধারাবাহিকতায় নাযিল হয়, যখন মুসলমানরা যুদ্ধ, দাওয়াহ এবং ইসলাম কায়েমে অনেক ব্যয় ও আত্মত্যাগে নিমজ্জিত ছিল। কিছু সাহাবা ব্যয় থেকে বিরত থাকতে চাচ্ছিলেন, তখন এই আয়াত নাজিল হয়। এতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়—ব্যয় না করা বা দায়িত্ব এড়িয়ে চলা মানে আত্মবিনাশের পথ বেছে নেওয়া।