সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৩ নং আয়াতের তাফসীর

١٣ - وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ اٰمِنُوۡا کَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ کَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ ؕ اَلَاۤ اِنَّهُمۡ هُمُ السُّفَهَآءُ وَ لٰکِنۡ لَّا یَعۡلَمُوۡنَ
উচ্চারণ: ও ইযা-ক্বী-লা লাহুম আ-মীনূ-কা-মা আ-মানান্না-ছু, ক-লূ আনূ.মিনু কামা-আ-মানাচ্ছুফাহা-উ। আলা ইন্নাহুম হুমুচ্ছুফাহা-উ ওয়ালাকিল লা-ইয়ালামূ-ন।
অনুবাদ: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে’, তারা বলে, ‘আমরা কি ঈমান আনব যেমন নির্বোধরা ঈমান এনেছে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না।

তাফসীর

১. আয়াতের প্রতিটি অংশের বিস্তারিত তাফসীর:

وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ
"ও ইযা" অর্থে এবং যখন,
"قِیۡلَ لَهُمۡ" অর্থে তাদের বলা হয়
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুনাফিকদেরকে যখন বিশ্বাস করতে বলা হয়।

اٰمِنُوۡا کَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ
"اٰمِنُوۡا" অর্থে বিশ্বাস করো,
"کَمَاۤ" অর্থে যেমন,
"اٰمَنَ" অর্থে বিশ্বাস করেছে,
"النَّاسُ" অর্থে মানুষেরা
এখানে বলা হচ্ছে, মুমিনদের মতো বিশ্বাস করতে বলা হচ্ছে, যারা সত্যিকারের ঈমান এনেছে।

قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ کَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ
"قَالُوۡۤا" অর্থে তারা বলল,
"اَنُؤۡمِنُ" অর্থে আমরা কি বিশ্বাস করবো?,
"کَمَاۤ" অর্থে যেমন,
"اٰمَنَ" অর্থে বিশ্বাস করেছে,
"السُّفَهَآءُ" অর্থে নির্বোধেরা
এখানে মুনাফিকরা তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করতে চায়, তারা মুসলিমদের ঈমানের উপর তাচ্ছিল্য করে বলছে, “আমরা কি নির্বোধদের মতো বিশ্বাস করবো?”

اَلَاۤ اِنَّهُمۡ هُمُ السُّفَهَآءُ
"اَلَاۤ" অর্থে জানো,
"إِنَّهُمۡ" অর্থে নিশ্চয়ই তারা,
"هُمُ" অর্থে তারা,
"السُّفَهَآءُ" অর্থে নির্বোধেরা
এখানে আল্লাহ তাদের প্রতি মন্তব্য করছেন যে, আসলে তারা নিজেদেরই নির্বোধ, যদিও তারা নিজেদেরকে বুদ্ধিমান মনে করে।

وَ لٰکِنۡ لَّا یَعۡلَمُوۡنَ
"وَ" অর্থে এবং,
"لٰکِنۡ" অর্থে কিন্তু,
"لَّا" অর্থে না,
"یَعۡلَمُوۡنَ" অর্থে তারা জানে না
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুনাফিকরা জানে না যে তারা নিজেদেরই ভুল করছে, তাদের যে অবস্থায় থাকা উচিত তা বুঝতে পারছে না।


২. আয়াতের ব্যাখ্যা:

এ আয়াতে আল্লাহ মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন। যখন তাদের বলা হয়, “বিশ্বাস করো, যেমন সত্যিকারের মুমিনরা বিশ্বাস করেছে,” তারা তখন তাচ্ছিল্য করে এবং বলে, “আমরা কি নির্বোধদের মতো বিশ্বাস করবো?” এর মাধ্যমে তারা মুমিনদের ঈমান এবং বিশ্বাসের উপর তাচ্ছিল্য করেছে। আল্লাহ তাদের উত্তরে বলছেন যে, তারা আসলে নিজেদের নির্বোধ মনে করছে না, অথচ তারা নিজেদেরই সবচেয়ে বড় নির্বোধ। তারা নিজের ভুল বোঝে না এবং জানে না যে, তারা কী করছে।

এটি তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজেদের বাস্তব অবস্থা না জানার প্রতিফলন। তাদের ধারণা ছিল, ইসলামী জীবনযাপন ও ঈমানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের চেতনাহীন কুপথে চলা সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। আল্লাহ তাদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে তারা আসলে সবচেয়ে নির্বোধ, যদিও তারা নিজেদের সঠিক মনে করে।


৩. আয়াতের শিক্ষা:

অহংকার এবং আত্মবিশ্বাসের সীমাবদ্ধতা: মুনাফিকরা নিজেদেরকে বুদ্ধিমান মনে করেছিল, কিন্তু তাদের আসল অবস্থার সাথে তারা অপরিচিত ছিল। এটি আমাদের শিখায় যে অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস আমাদেরকে অন্ধ করে দিতে পারে।

কর্মের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করা: আমাদের কখনও কখনও নিজেদের কর্মের প্রকৃতি বুঝতে হবে এবং এটি সঠিক এবং সত্য কিনা, তা আত্মবিশ্বাসের সাথে মূল্যায়ন করতে হবে।

নির্বোধতার বিপদ: মুনাফিকরা নিজেদের নির্বোধ মনে না করলেও আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলছেন যে তারা আসলে সবচেয়ে নির্বোধ। এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে নিজের অজ্ঞতা বা মূর্খতা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


৪. নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল):

এ আয়াতটি মুনাফিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা ইসলামকে ও মুসলিমদের বিশ্বাসকে তাচ্ছিল্য করতো এবং তাদের ঈমানকে উপহাস করতো। তারা নিজেদের বুদ্ধিমান মনে করতো এবং সত্যিকার বিশ্বাসের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো। আল্লাহ তাদের প্রকৃত অবস্থা উন্মোচন করেছেন এবং তাদের নির্বোধতা প্রকাশ করেছেন।


তাফসীরে: