আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
فَاِنِ انۡتَهَوۡا
অতএব, যদি তারা বিরত হয় — এখানে "ইন্তাহাউ" শব্দটি এসেছে 'ইন্তিহা' ধাতু থেকে, যার অর্থ বিরত হওয়া বা থেমে যাওয়া। এটি মুশরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে—যদি তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কুফরি ও শিরক থেকে ফিরে আসে এবং সত্যের পথে আসে, তবে তাদের আগের অপরাধ মাফ করা হতে পারে।
فَاِنَّ اللّٰهَ
তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ — এখানে 'ফা-ইন্নাল্লাহ' দ্বারা একটি আশ্বস্ত করার বাক্য শুরু হয়েছে। এটি বোঝাচ্ছে যে যদি তারা সত্যিই ফিরে আসে, তবে আল্লাহ সম্পর্কে জেনে রাখো—তিনি কী রকম?
غَفُوۡرٌ
অতি ক্ষমাশীল — আল্লাহ এমন সত্তা যিনি বারবার ক্ষমা করেন। কোনো ব্যক্তি যদি কুফরি ও শিরক থেকেও ফিরে আসে, আল্লাহ তাও ক্ষমা করে দেন যদি সে খাঁটি মনে তওবা করে।
رَّحِیۡمٌ
পরম দয়ালু — আল্লাহর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি শুধু অপরাধ মাফ করেই ক্ষান্ত থাকেন না, বরং তার উপর দয়া বর্ষণও করেন। যারা ফিরে আসে তাদের প্রতি আল্লাহর করুণা সীমাহীন।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের ঘোষণা দিয়েছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে যুদ্ধ ও কুফরির পরিণতি বর্ণনার পর, এই আয়াতে বলা হচ্ছে—যদি তারা বিরত হয়, সত্যের দিকে ফিরে আসে, তবে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে—তওবার দরজা সবসময় খোলা থাকে। এই আয়াত মুশরিকদের সতর্ক করে ও আহ্বান করে ইসলামের পথে ফিরে আসার জন্য।
ইসলামে তওবা ও ফিরে আসার সুযোগ সব সময়ই খোলা থাকে।
আল্লাহর গুণাবলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি গুণ হলো—গাফুর (ক্ষমাশীল) ও রাহীম (দয়ালু)।
কোনো ব্যক্তি অতীতের যত বড় পাপই করুক না কেন, যদি সে খাঁটি মনে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।
ইসলামে প্রতিশোধ বা কঠোরতা থাকলেও দয়া ও ক্ষমার জায়গা সবসময় অগ্রাধিকার পায়।
এই আয়াতটি সূরা আল-বাকারা বা সূরা আত-তাওবা-এর ধারাবাহিকতায় নাযিল হয়, যেখানে মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ এবং তাদের আচরণ সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাফেরদের প্রতি যে কঠোর অবস্থান ইসলামে রয়েছে, সেই অবস্থানের মধ্যেও যদি তারা ফিরে আসে, আল্লাহর ক্ষমা তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে—এই বার্তাটি দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে।