আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ اقۡتُلُوۡهُمۡ حَیۡثُ ثَقِفۡتُمُوۡهُمۡ
তোমরা তাদের হত্যা করো যেখানে তাদের পাও
মুশরিকরা যখন মুসলমানদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তখন যেখানে তাদের পাওয়া যায় — সেখানেই যুদ্ধ করার নির্দেশ এসেছে।
وَ اَخۡرِجُوۡهُمۡ مِّنۡ حَیۡثُ اَخۡرَجُوۡکُمۡ
তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে
মক্কার কাফিররা মুসলমানদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দিয়েছিল। এখন তাদেরকেও মদিনা থেকে নয়, বরং মক্কা থেকেই প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
وَ الۡفِتۡنَۃُ اَشَدُّ مِنَ الۡقَتۡلِ
ফিতনা (শিরক, অত্যাচার) হত্যার চেয়েও গুরুতর
শিরক, জুলুম ও ঈমান নষ্ট করার চাপ — এগুলো এমন অপরাধ যা শুধু কারো জীবনহানির চেয়েও ভয়াবহ।
وَ لَا تُقٰتِلُوۡهُمۡ عِنۡدَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ حَتّٰی یُقٰتِلُوۡکُمۡ فِیۡهِ
আর মসজিদুল হারামের নিকট তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো না, যতক্ষণ না তারা সেখানে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে
মসজিদুল হারাম ও এর পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি — সেখানে যুদ্ধ শুরু করা যাবে না, যদি না শত্রু প্রথমে আক্রমণ করে।
فَاِنۡ قٰتَلُوۡکُمۡ فَاقۡتُلُوۡهُمۡ
কিন্তু যদি তারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তবে তোমরা তাদের হত্যা করো
আত্মরক্ষার অধিকার এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামলাকারীকে দমন করাই ন্যায়।
کَذٰلِکَ جَزَآءُ الۡکٰفِرِیۡنَ
এটাই কাফিরদের প্রতিফল
যারা সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, অত্যাচার চালায়, তাদের জন্য এই শাস্তিই ন্যায্য।
এই আয়াতে মুসলমানদেরকে স্পষ্টভাবে আত্মরক্ষার ও প্রতিশোধের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যারা মুসলমানদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দিয়েছে, হত্যা করেছে, ঈমান থেকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে — তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে এই যুদ্ধও সীমিত এবং ন্যায়নিষ্ঠ। পবিত্র স্থান যেমন মসজিদুল হারাম — সেখানে কোনো যুদ্ধ করা যাবে না, যদি না শত্রু সেখানেই আগ্রাসন চালায়। আর ফিতনা (যেমন: শিরক, ঈমানহরণ, অত্যাচার) হত্যার চেয়েও ভয়াবহ বলে বিবেচিত হয়েছে।
ইসলাম আত্মরক্ষা ও ন্যায্য প্রতিরোধের অনুমতি দেয়।
শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ, তবে তা সীমার মধ্যে হতে হবে।
পবিত্র স্থানসমূহে যুদ্ধ শুধু আত্মরক্ষায় বৈধ।
ফিতনা বা শিরক — হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ।
প্রতিটি যুদ্ধের পেছনে থাকা উদ্দেশ্য হওয়া চাই — আল্লাহর পথে জুলুম দূর করা।
মক্কার কাফিররা রাসূল ﷺ ও সাহাবাদের উপর নির্যাতন করে মক্কা থেকে বের করে দেয়। হিজরতের পর মুসলমানদেরকে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। এই আয়াত সেই প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়, যেখানে বলা হয় যে, যেভাবে তারা তোমাদেরকে বের করেছে, আমরাও তাদেরকে প্রতিরোধ করো। তবে যুদ্ধ সীমা লঙ্ঘন বা আগ্রাসনের জন্য নয় — বরং ফিতনার অবসান ঘটাতে হবে।