সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১২ নং আয়াতের তাফসীর

١٢ - اَلَاۤ اِنَّهُمۡ هُمُ الۡمُفۡسِدُوۡنَ وَ لٰکِنۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ
উচ্চারণ: আলা ইন্নাহুম হুমুল মুফছিদু-না ওয়া লা-কিল লা ইয়াশউরু-ন।
অনুবাদ: জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা ফাসাদকারী, কিন্তু তারা তা বুঝে না।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

اَلَاۤ
"اَلَا" অর্থে জানো, লক্ষ্য করো,
এটি ব্যবহার করা হয়েছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে আনার জন্য, যেখানে আগের কথার সঙ্গে সম্পর্কিত এক নতুন ধারণা বা বিষয় উপস্থাপন করা হয়।

اِنَّهُمۡ هُمُ الۡمُفۡسِدُوۡنَ
"إِنَّهُمۡ" অর্থে নিশ্চয়ই তারা,
"هُمُ" অর্থে তারা,
"المُفۡسِدُوۡنَ" অর্থে মন্দকারীরা বা যারা ভঙ্গুরতা সৃষ্টি করে
এখানে আল্লাহ এই আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে বলছেন যে, তারা সমাজে আসলেই বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করছে, যদিও তারা নিজেদের সৎ বলে দাবি করে।

وَ لٰکِنۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ
"وَ" অর্থে এবং,
"لٰکِنۡ" অর্থে কিন্তু,
"لَّا" অর্থে না,
"یَشۡعُرُوۡنَ" অর্থে তারা অনুভব করে না
এখানে বলা হচ্ছে যে, এই মন্দকারীরা আসলে নিজেদের ক্ষতিকর কাজের প্রকৃতি বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের কাজের পরিণতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তারা বুঝতে পারে না যে তাদের কাজ সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন যারা নিজেদের কাজকে সৎ এবং সংস্কারমূলক (শুদ্ধকারক) বলে দাবি করতো, কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। আল্লাহ তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য উন্মোচন করছেন এবং বলছেন যে, তারা সমাজে অশান্তি তৈরি করছে, যদিও তারা এ বিষয়ে সচেতন নয়। তারা নিজেদের কাজের ক্ষতিকর প্রভাব এবং উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না। তারা নিজেদের সংস্কারক (শুদ্ধকারক) বলে দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং বিপথগামিতার সৃষ্টি করছে।


আয়াতের শিক্ষা

সতর্কতা এবং আত্মসমালোচনা: এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, কোনো কাজ করার আগে আমাদের তা বুঝে, চিন্তা করে করতে হবে। আমরা যদি কোনো কাজ করি, তা যেন সমাজে ক্ষতি না করে।
নিজের কাজের প্রকৃতি বুঝে কাজ করা: মুনাফিকরা নিজেদের কাজে আসল উদ্দেশ্য বোঝেনি। আমরাও যদি নিজেদের কাজ বা কর্মকাণ্ডের প্রকৃতি ভুল বুঝে করি, তাহলে তা অন্যদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যদের কাজের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করা: এই আয়াতটি আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, অন্যদের কাজের প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য যাচাই করা উচিত। যে ব্যক্তি সৎ ও ভালো কাজের কথা বলে, তার কাজের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, তা আমরা বুঝতে পারা উচিত।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এ আয়াতটি মুনাফিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে যারা নিজেদেরকে সৎ, সংস্কারক বা সমাজের মঙ্গলার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতো, অথচ তারা আসলে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতো এবং ইসলামের বিরোধিতা করতো। তারা নিজেদের কাজের ক্ষতিকর প্রভাব বোঝার মতো উপলব্ধি ছিল না এবং নিজেদেরকে সৎ বলে দাবি করতো, যদিও তারা সত্যিকার অর্থে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল।


তাফসীরে: