সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৮৩ নং আয়াতের তাফসীর

١٨٣ - یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
উচ্চারণ: ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ কুতিবা ‘আলাইকুমুস্ সিয়ামু কামা কুতিবা ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিকুম লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন।
অনুবাদ: হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا

হে ঈমানদারগণ!
এই শব্দবন্ধে আল্লাহ তা’আলা বিশেষভাবে ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করছেন, যা নির্দেশ করে যে এই আদেশ শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য। কুরআনে যেখানেই এই সম্বোধন ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিধান বা নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ

তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে
এখানে "কুতিবা" শব্দটি নির্দেশ করে ফরজ হওয়ার অর্থে। অর্থাৎ রোযা রাখা কেবল সুপারিশ নয়, বরং এটি একটি অবশ্য পালনীয় ইবাদত।


کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ

যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর
এতে বোঝায়, রোযা শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর উপর নয়, বরং পূর্ববর্তী নবী ও জাতিগুলোর ওপরও রোযা ফরজ ছিল। এটি একটি সর্বজনীন ইবাদত, যার মাধ্যমে আত্মসংযম চর্চা হয়।


لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো
এখানে রোযার মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা হয়েছে — তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা। রোযা মানুষের মধ্যে আত্মসংযম, পাপ থেকে বিরত থাকা এবং অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জনে সহায়ক।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদেরকে রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে এটি কোনো নতুন বিধান নয়, বরং পূর্ববর্তী জাতিদের ওপরও রোযা ফরজ ছিল। এই ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম করে তোলা এবং তাদের অন্তরে আল্লাহভীতি তথা তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি করা। রোযা শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করার নাম নয়, বরং এটি আত্মা শুদ্ধির একটি প্রশিক্ষণ।


আয়াতের শিক্ষা

  1. রোযা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত।

  2. এটি শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদের জন্য নয়, পূর্ববর্তী জাতিগুলোর জন্যও ফরজ ছিল — এটি ইসলামের সর্বজনীনতা প্রমাণ করে।

  3. রোযার আসল উদ্দেশ্য হল তাকওয়া অর্জন করা, যার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে।

  4. ইবাদতের মাধ্যমেই সত্যিকার চরিত্র ও আত্মিক উন্নয়ন সম্ভব।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি মদীনায় হিজরতের পর দ্বিতীয় হিজরিতে নাযিল হয়। তখন মুসলিমদের উপর প্রথমবারের মতো রমযানের রোযা ফরজ করা হয়। আগে রোযা ছিল ঐচ্ছিক, পরবর্তীতে এটি ফরজ করা হয় এই আয়াতের মাধ্যমে। রোযা একটি পরিশুদ্ধির মাধ্যম, যা মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আচরণ ও চরিত্রকে শুদ্ধ করে তোলে।


তাফসীরে: