আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ
গণনিত কয়েকটি দিন
রোযা একটি সীমিত সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে — পুরো বছরের জন্য নয়, বরং এক মাসের। এখানে সহজতা ও ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে।
فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ
তোমাদের কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে
যদি কেউ রোযা রাখতে শারীরিকভাবে অক্ষম হয় বা সফরে থাকার কারণে কষ্ট হয়, তবে তার জন্য ছাড় রয়েছে।
فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ
সে যেন অন্য কিছু দিনে রোযা পূর্ণ করে নেয়
অর্থাৎ পরে সুস্থ হলে বা সফর শেষে রোযা পূরণ করতে হবে। এটি ইসলামের নমনীয়তা ও ব্যবহারিক বাস্তবতার পরিচায়ক।
وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ
যারা রোযা রাখতে পারলেও কষ্ট সহ্য করে
এই অংশে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বৃদ্ধ বা স্থায়ী দুর্বল শরীরের অধিকারীদের, যাদের পক্ষে রোযা রাখা কষ্টকর হয়।
فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ
তাদের জন্য ফিদিয়া হলো একজন মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া
রোযা রাখতে না পারলে একজন দরিদ্রকে খাদ্য দেওয়ার বিকল্প রাখা হয়েছে। এটি রোযার সামাজিক ও মানবিক দিককে তুলে ধরে।
فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ
যে স্বেচ্ছায় উত্তম কিছু করে, তা তার জন্য উত্তম
ফিদিয়া দেয়ার বাইরে যে আরও বেশি সদকা বা ভালো কাজ করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তম প্রতিদান নির্ধারণ করবেন।
وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
আর যদি তোমরা রোযা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্য ভালো — যদি তোমরা জানতে
রোযা না রাখার শর্ত থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন — রোযা রাখা আত্মিক, শারীরিক ও আখিরাতের দিক দিয়ে উত্তম।
এই আয়াতে রমযানের রোযার বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রোযা হলো নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য — যেটা বাস্তব ও সহনীয়। এরপর অসুস্থতা ও সফরের কারণে ছাড়ের বিধান দেয়া হয়েছে, যাতে কারো উপর অযথা কষ্ট না হয়। আর যারা রোযা রাখতে পারলেও কষ্ট পান, তাদের জন্য বিকল্প ফিদিয়ার পথ খুলে রাখা হয়েছে। তবুও আল্লাহ বলেছেন, রোযা রাখাই তোমাদের জন্য উত্তম — কেননা রোযা শুধু শারীরিক অনুশীলন নয়, বরং আত্মিক প্রশিক্ষণ।
ইসলাম সহজতা ও নমনীয়তার ধর্ম — অসুস্থতা ও সফরের কারণে রোযার ছাড় রয়েছে।
রোযা শুধু ইবাদত নয়, মানবিকতার চর্চা — যারা রাখতে পারে না তারা গরীবদের খাওয়ায়।
ফিদিয়া দিলেও স্বেচ্ছায় বেশি সদকা করলে আল্লাহ আরও উত্তম প্রতিদান দেন।
আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, কষ্ট হলেও রোযা রাখাই অধিক কল্যাণকর — কারণ এর আত্মিক ও আখিরাতমূলক উপকারিতা।
এই আয়াতটি রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার প্রাথমিক সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তখন প্রথমদিকে রোযা ছিল কিছুটা ঐচ্ছিক — ফিদিয়া দেওয়ারও বিকল্প ছিল। কিন্তু পরে (আয়াত ১৮৫ এ) রোযা ফরজের বিধান কঠোরভাবে আসলে ঐচ্ছিকতার পরিবর্তে স্থায়ী ফরজ হিসেবে কার্যকর হয়। এই আয়াতের মাধ্যমে মূলত ধাপে ধাপে রোযার বিধান মুসলিমদের মাঝে বাস্তবতা অনুযায়ী সহজভাবে প্রবর্তন করা হয়।