আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
کُتِبَ عَلَیۡکُمۡ —
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন যে এই বিধান তোমাদের ওপর ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
اِذَا حَضَرَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ —
যখন তোমাদের কারো মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, অর্থাৎ কেউ মৃত্যুর সময় সম্মুখীন হয়।
اِنۡ تَرَکَ خَیۡرَۨا —
যদি সে কিছু "খাইর" অর্থাৎ সৎ ও ভালো সম্পদ বা মাল-দুলাল রেখে যায়।
الۡوَصِیَّۃُ لِلۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ —
এবং ওয়াসিয়াত বা وصیت করা উচিৎ মা'রুফ (ভালো ও ন্যায়সঙ্গত) উপায়ে বাবা-মা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য।
حَقًّا عَلَی الۡمُتَّقِیۡنَ —
এটি অবশ্যই তাকওয়া অর্জনকারী অর্থাৎ আল্লাহভীরু ও পরহেযগারদের ওপর অধিকার ও ফরজ।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিষ্পত্তি করেছেন যে, মৃত্যুর সময় যখন কোনো ব্যক্তি কিছু সৎ সম্পদ রেখে যান, তখন তাঁর উচিত সেটি ওয়াসিয়াতের মাধ্যমে তার বাবা-মা এবং আত্মীয়দের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে ভাগ করে দেয়া। এটি আল্লাহভীরুদের জন্য বিশেষ একটি ফরজ কর্তব্য, কারণ তারা আল্লাহর আদেশ মেনে সমাজ ও পরিবারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
১. মৃত্যুর আগেই সৎ সম্পদ যথাযথভাবে বণ্টন করা জরুরি।
২. ওয়াসিয়াত বা وصیت করা আবশ্যক, বিশেষ করে বাবা-মা ও আত্মীয়দের জন্য।
৩. আল্লাহভীরু ব্যক্তিরা এই বিধান কঠোরভাবে পালন করবে।
৪. পরিবার ও সমাজে ন্যায়বিচারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় ওয়াসিয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
এই আয়াতটি ইসলামের প্রথম যুগে নাযিল হয় যখন মুসলিমরা সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টনের নিয়ম ও ওয়াসিয়াত বিষয়ক স্পষ্ট নির্দেশনার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। পূর্বে আরব সমাজে সম্পদের বণ্টন অনিয়মিত ও অবিচারপূর্ণ ছিল, যা পারিবারিক দাঙ্গা-বিদাঙ্গার কারণ ছিল। আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের মাধ্যমে ওয়াসিয়াতের গুরুত্ব ও বিধান স্পষ্ট করেছেন।
দলিল:
তাফসীর ইবনে কাসীর, "আল-বাকারা" (২:১৮০)
তাফসীর আত-তাবারি, "জামি আল-বয়ান" খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬৭-৩৭০
সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৬৫৩ (ওয়াসিয়াত ও সম্পদ বণ্টন নিয়ে বাণী)