আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
এই শব্দটির অর্থ “এটি”। এটি পূর্ববর্তী বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে, বিশেষ করে পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির হুঁশিয়ারি এবং বিশ্বাসীদের প্রতি সত্যের আহ্বানের প্রসঙ্গে।
এই কারণে যে, আল্লাহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সত্য সহ।
এ অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীম সত্য সহ প্রেরণ করেছেন — এতে কোনো কল্পনা, বানানো গল্প বা মনগড়া কিছু নেই। এটি সত্য, ন্যায় ও পথনির্দেশনা বহনকারী এক মজবুত কিতাব।
আর যারা কিতাব সম্পর্কে মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে
এখানে ইহুদি, নাসারা এবং এমন মুসলিমদের কথা বলা হচ্ছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর কিতাব নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের স্বার্থ, দলীয়তা বা অহংকারের জন্য সত্য গোপন করে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।
তারা তো এক গভীর বিরোধিতায় লিপ্ত
এই অংশ বোঝায়, তারা শুধু মতবিরোধে পড়ে নাই, বরং তারা সত্য থেকে একেবারে ভিন্ন পথে চলে গেছে — একেবারে দূরে চলে গেছে হক থেকে, বিভ্রান্তির চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছে।
আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে জানিয়ে দিয়েছেন যে কুরআন একটি সত্য কিতাব, যেটা তিনি নিজের পক্ষ থেকে নাযিল করেছেন। কিন্তু কিছু লোক (ইহুদি-নাসারা এবং মুনাফিক) নিজেদের স্বার্থে কিতাব নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করে, ব্যাখ্যা বিকৃতি ঘটায় এবং বিভ্রান্তি ছড়ায়। ফলে তারা সত্য থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে যায়। তাদের বিভেদ কেবল মানসিক বা বুদ্ধিগত নয়, বরং তারা এমন এক বিভ্রান্তির গভীরে পড়ে যায় যেখান থেকে সত্যে ফিরে আসা কষ্টকর।
আল্লাহর কিতাব (কুরআন) সত্য এবং ন্যায়ের পথপ্রদর্শক।
যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কিতাবের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা হক থেকে অনেক দূরে থাকে।
সত্য গ্রহণে অহংকার, হিংসা ও দলীয়তা মানুষকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়।
বিবাদ ও মতভেদের উৎস অনেক সময় কিতাবকে না বুঝে বা ভুল ব্যাখ্যা করে ব্যবহার করা।
এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে ইহুদিদের কিতাব তাওরাত এবং নাসারাদের ইনজিল সম্পর্কে, যাদের দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সত্য গোপন করে এবং একে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে।
ইবনে আবি হাতিম তার তাফসীরে উল্লেখ করেছেন: ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য, তারা কিতাবের অংশ গ্রহণ করে, আবার অংশ অস্বীকার করে।”
— (সূত্র: তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা আল বাকারা ১৭৬-এর অধীন আলোচনা)