আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
তারা তারাই, যারা হিদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা গ্রহণ করেছে।
এই অংশে বলা হয়েছে, তারা জেনে-বুঝেই সত্য তথা সঠিক পথকে ত্যাগ করে ভুল পথকে বেছে নিয়েছে। এটা এক ধরনের বাণিজ্য, যেখানে তারা লাভজনক পণ্য (হিদায়াত) ফেলে দিয়ে ক্ষতিকর জিনিস (গোমরাহী) গ্রহণ করেছে।
এবং ক্ষমার বদলে শাস্তিকে গ্রহণ করেছে।
এরা এমন পথ অনুসরণ করেছে, যার ফলে তারা আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়ে আযাবের পাত্রে পরিণত হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেই কাজ করেছে, যা শাস্তির উপযুক্ত করে তোলে।
তারা কেমন ধৈর্য ধারণ করছে জাহান্নামের উপর!
এখানে ‘ধৈর্য’ বলতে উপহাস বুঝানো হয়েছে। বাস্তবে কেউই আগুনে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। এটা আসলে তাদের মূর্খতা, গাফেলতা ও অজ্ঞতার প্রতি এক ধরনের তিরস্কার ও অবজ্ঞা।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী আয়াতের (আয়াত ১৭৪) অপরাধীদের পরিণতির আরও গভীর চিত্র তুলে ধরেছেন। যারা আল্লাহর কিতাব গোপন করে, তারা যেন হিদায়াত ছেড়ে গোমরাহি, আর মাগফিরাত ছেড়ে আযাব কিনে নেয়। এটি এমন এক ক্রয়-বিক্রয় যা পরকালে চরম ক্ষতির কারণ হবে।
শেষাংশ “তারা কেমন ধৈর্য ধরে জাহান্নামের উপর!” — এটি একটি ইস্তিফহাম তাআজ্জুবী (تعجبমূলক প্রশ্ন) যা তীব্রভাবে নিন্দা ও তিরস্কার প্রকাশ করে। উদ্দেশ্য হলো বোঝানো, তারা কত বড় মূর্খ যে নিজের ইচ্ছায় জাহান্নামের রাস্তা বেছে নিয়েছে!
১. সত্য জেনে গোমরাহির পথ বেছে নেওয়া ভয়ানক গুনাহ।
২. আল্লাহর হেদায়াত পরিত্যাগ করা মানেই আযাবকে গ্রহণ করা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে শাস্তির পথ বেছে নেওয়া এক চরম মূর্খতা।
৪. আল্লাহ তায়ালা গাফিল ও সত্য গোপনকারীদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন।
৫. দুনিয়ার সাময়িক লাভের জন্য হিদায়াত বিক্রি করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
এই আয়াত পূর্ববর্তী আয়াতের (আয়াত ১৭৪) ধারাবাহিকতা। ইহুদি ও খ্রিস্টান পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকে ছিলেন যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত ও সত্যতা তাদের কিতাবে দেখতে পেয়েও তা গোপন করতেন এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন। তারা নিজেদের দুনিয়াবী স্বার্থের জন্য আল্লাহর কিতাব বিকৃত করত।
এই আয়াত তাদেরকে লক্ষ্য করে একটি চূড়ান্ত সতর্কতা। তারা সত্য ছেড়ে মিথ্যা বেছে নিয়েছে এবং মাগফিরাত ছেড়ে আযাবের দিকে ধাবিত হয়েছে। এজন্য কিয়ামতের দিন তারা জাহান্নামে নিপতিত হবে।