আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ مِنَ الۡکِتٰبِ —
নিশ্চয়ই যারা গোপন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাবের অংশ।
এই অংশে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, যারা তাওরাত ও ইনজিলের সেই অংশ গোপন করত, যেখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন, শেষ নবী হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। এটি শুধু তথ্য গোপন নয়, বরং সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান।
وَ یَشۡتَرُوۡنَ بِهٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا —
এবং তার বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে।
অর্থাৎ তারা দুনিয়ার স্বার্থ, সম্মান, টাকা-পয়সা, পদের লোভে সত্য গোপন করে। এখানে ‘তুচ্ছ মূল্য’ বলতে এমন লাভ বোঝানো হয়েছে যা পরকালের তুলনায় একেবারে মূল্যহীন।
اُولٰٓئِکَ مَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِهِمۡ اِلَّا النَّارَ —
তারা তাদের পেটে আগুনই পুরে।
তাদের দুনিয়ার খাবার আসলে আগুনের শাস্তি ডেকে আনছে। এটা রূপকভাবে বলা হয়েছে যে, হারাম উপার্জন আখিরাতে ভয়ানক আগুনে রূপ নেবে।
وَ لَا یُکَلِّمُهُمُ اللّٰهُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ —
কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না।
এই বাক্যটি তাদের প্রতি আল্লাহর ক্রোধের প্রকাশ—যাদের সঙ্গে কথা বলাই হবে না, তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে চরম ঘৃণা বোঝানো হয়েছে।
وَ لَا یُزَکِّیۡهِمۡ —
তাদের পবিত্র করবেন না।
তাদের আত্মা বা চরিত্র শুদ্ধ করার কোনো সুযোগ থাকবে না, কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর কিতাব বিকৃতি করেছে।
وَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ —
আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।
এই শাস্তি শুধু শারীরিক নয়, আত্মিক, মানসিক এবং অপমানজনকও হবে। আল্লাহর দয়াহীন অবস্থায় তারা জাহান্নামে নিপতিত হবে।
এই আয়াত মূলত তাদের বিরুদ্ধে নাযিল হয়েছে যারা ধর্মীয় জ্ঞান গোপন করে, বিকৃত করে এবং নিজেদের স্বার্থে বিক্রি করে দেয়। ইহুদিদের বড় একটি শ্রেণি নবী করিম (সা.)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী জেনেও তা গোপন করেছিল। এমন গোপনকারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর দয়াহীন অবস্থায় থাকবে। আয়াতে বলা হয়েছে, তারা যত কিছু খায়, আসলে তা পেটে আগুন ঢুকানোর শামিল। আল্লাহ তাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেবেন, আর শাস্তি হবে ভয়াবহ।
১. আল্লাহর কিতাবের সত্য গোপন করা চরম অপরাধ।
২. দুনিয়ার সামান্য লাভের জন্য সত্য বিক্রি করা আত্মঘাতী কাজ।
৩. হারাম রিজিক আখিরাতে আগুনের রূপ নেয়।
৪. আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে সে চরম ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
৫. ইচ্ছাকৃত সত্য গোপনকারী দুনিয়ায় লাভবান হলেও আখিরাতে লাঞ্ছিত হবে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই আয়াত ইহুদিদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা তাওরাতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিচয় জেনেও তা গোপন করেছিল। তারা কিতাব বিকৃতি করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করত, যাতে তাদের ধর্মীয় প্রভাব ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় থাকে।
দলিল:
তাফসীর ইবনে কাসীর
তাফসীর তাবারী, আয়াত ১৭৪