আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ — নিঃসন্দেহে তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু। এখানে "মাইতাহ" বলতে বুঝানো হয়েছে যে পশু স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে, না জবাই করা হয়েছে ইসলামী পদ্ধতিতে।
وَ الدَّمَ — এবং রক্ত। অর্থাৎ প্রবাহিত রক্ত, যা পশু জবাইয়ের সময় বের হয়ে আসে। এমন রক্ত পান বা গ্রহণ করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
وَ لَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ — এবং শুকরের মাংস। ইসলাম ধর্মে এটি সম্পূর্ণ হারাম, কারণ এটি শারীরিক ও আত্মিকভাবে অপবিত্র এবং নাজায়েজ।
وَ مَاۤ اُهِلَّ بِهٖ لِغَیۡرِ اللّٰهِ — এবং যেসব জিনিস আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। যেমন: মূর্তি, দেবতা বা অলিদের নামে জবেহকৃত পশু — এগুলোও হারাম।
فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ — কিন্তু যে বাধ্য হয় এবং সে অবাধ্য কিংবা সীমালঙ্ঘনকারী নয়। অর্থাৎ প্রাণ রক্ষার প্রয়োজনে অল্প পরিমাণ গ্রহণ করলে গোনাহ হবে না, যদি তার উদ্দেশ্য হয় বাঁচা, ভক্ষণে আনন্দ খোঁজা নয়।
فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡهِ — তাহলে তার কোনো গোনাহ নেই। কারণ ইসলাম মানবজীবন রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়।
اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ — নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তিনি এমন পরিস্থিতিতেও ক্ষমা করেন, যখন বান্দা অনিচ্ছায় নিষিদ্ধ কিছু গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
এই আয়াতে ইসলাম যে চারটি বস্তুকে পরিষ্কারভাবে হারাম ঘোষণা করেছে তা হলো: মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শুকরের মাংস এবং যেসব পশু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম হলো—যদি কেউ ক্ষুধার্ত হয়ে, মৃত্যুপ্রায় অবস্থায় এগুলো খেতে বাধ্য হয় এবং তার উদ্দেশ্য গোনাহ করা না হয়, তবে তার জন্য তা বৈধ হবে। এটি ইসলামের রহমত ও মানবিকতার এক বিরাট নিদর্শন।
১. ইসলাম নির্দিষ্ট কিছু খাবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, বিশেষ করে অপবিত্র ও উপাসনাসূচক জিনিস।
২. প্রয়োজনের মুহূর্তে ইসলামে ছাড়ের সুযোগ আছে।
৩. জীবনের নিরাপত্তা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
৪. আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু—তিনি অনিচ্ছাকৃত ভুল ও বাধ্যতামূলক অবস্থার গোনাহ মাফ করেন।
এই আয়াতটি সেইসব লোকদের জবাবে নাযিল হয় যারা পূর্ববর্তী আয়াতে হালাল ও পবিত্র খাদ্য খাওয়ার আদেশের পর জানতে চায়—কোন জিনিসগুলো হারাম?
তাফসীর ইবনে কাসীর ও তাফসীর তাবারী অনুযায়ী, এই আয়াত মদিনায় হিজরতের পর নাযিল হয়, যেখানে সাহাবায়ে কেরাম হালাল-হারাম বিষয়ে অধিক জানতে আগ্রহী হন এবং আল্লাহ তা'আলা তখন তাদের চারটি জিনিসকে স্পষ্ট হারাম হিসেবে ঘোষণা করেন।
দলিল:
তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা বাকারা, আয়াত ১৭৩
তাফসীর তাবারী, জিল্দ ২, পৃষ্ঠা ১৭৬