সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১১ নং আয়াতের তাফসীর

١١ - وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُوۡنَ
উচ্চারণ: ওয় ইযা ক্বী-লা লাহুম লা-তুফসিদু ফিল আরদি, ক্বলু-ইন্নামা-নাহনু মুছলিহু-ন।
অনুবাদ: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা যমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করোনা’, তারা বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী’।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ
"وَ" অর্থে এবং,
"إِذَا" অর্থে যখন,
"قِیۡلَ" অর্থে তাদেরকে বলা হয়
"لَهُمۡ" অর্থে তাদের জন্য
এখানে, যখন মুনাফিকদেরকে কিছু বলা হয় বা সতর্ক করা হয়।

لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ
"لَا" অর্থে না,
"تُفۡسِدُوۡا" অর্থে তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না,
"فِی" অর্থে এতে বা মধ্যে,
"الۡاَرۡضِ" অর্থে পৃথিবী বা সমাজে
এখানে আল্লাহ মুনাফিকদের সতর্ক করছেন যে তারা যেন সমাজে বা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।

قَالُوۡۤا اِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُوۡنَ
"قَالُوۡۤا" অর্থে তারা বললো,
"إِنَّمَا" অর্থে শুধু মাত্র,
"نَحۡنُ" অর্থে আমরা,
"مُصۡلِحُوۡنَ" অর্থে সংশোধক বা সংস্কারক
এখানে মুনাফিকরা নিজেদের সংস্কারক (শুদ্ধকারক) বলে দাবি করে, যদিও তারা আসলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা নিজেদের কাজের জন্য অন্যকে মিথ্যাভাবে পরিশুদ্ধ বা ভাল কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এ আয়াতে মুনাফিকদের আচরণ বর্ণনা করা হয়েছে। যখন তাদেরকে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়, তখন তারা নিজেদের কাজের জন্য অজুহাত তৈরি করে এবং দাবি করে যে, তারা সমাজের উন্নতি বা শুদ্ধতার জন্য কাজ করছে। তবে, তাদের এই কার্যকলাপ আসলে সমাজের জন্য ক্ষতিকর, এবং তারা নিজেদের সত্যিকার উদ্দেশ্য গোপন রাখে।

এরা সেই ধরনের লোক যারা নিজেদের আসল উদ্দেশ্য ও কার্যকলাপকে সৎ বলে দাবি করে, অথচ তারা আসলে ইসলাম ও সমাজের প্রতি ক্ষতিকর। তারা নিজেদের কাজের সত্যিকার উদ্দেশ্যকে আড়াল করে এবং নিজেকে “সংশোধক” হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। এদের এই মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও চক্রান্ত আসলেই সমাজের ক্ষতি সাধন করে।


আয়াতের শিক্ষা

নিজের কাজের প্রকৃতি চিন্তা করা: এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, আমরা যেকোনো কাজ করলেও, আমাদের কাজের প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা উচিত। মুনাফিকরা নিজেদের কুকর্মকে সৎ ও ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করতো, তাই আমাদের নিজেদের কাজের ফলাফল ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করা উচিত।
সচেতনতা ও সতর্কতা: আমরা যদি কোনো কাজ করি, তা যেন সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হয়। সমাজের উন্নতি ও শুদ্ধতার জন্য আসল প্রচেষ্টা করতে হবে, এবং মিথ্যা বা সৎভাবনা ছাড়া কাজ করতে হবে।
মিথ্যা দাবি ও প্রতারণা: মুনাফিকরা মিথ্যা দাবি করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো, তাই আমাদের উচিত নিজের কাজের পেছনে থাকা উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার রাখা এবং সমাজে বিভ্রান্তি বা সমস্যা সৃষ্টি না করা।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি মুনাফিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতো কিন্তু নিজেদের কাজকে সৎ ও সংশোধনমূলক বলে দাবি করতো। তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো এবং যখন তাদেরকে সতর্ক করা হতো, তখন তারা নিজেদের সঠিক বা ভাল কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতো। এই আয়াতটি তাদের ভ false গঠনমূলক বক্তব্য ও তাদের কার্যকলাপের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে।


তাফসীরে: