আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ مَثَلُ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا — যেসব লোক ঈমান আনে না, তাদের উপমা দেয়া হচ্ছে; তাদের উদাহরণ দ্বারা বোঝানো হয়েছে, তারা কতটা অন্ধকারে নিমজ্জিত।
كَمَثَلِ الَّذِیۡ یَنۡعِقُ بِمَا لَا یَسۡمَعُ اِلَّا دُعَآءً وَّ نِدَآءً — তারা যেন সেই পশুর মতো, যার মালিক শুধু চিৎকার করে বা ডাক দিয়ে থাকে, কিন্তু পশু শুধু আওয়াজ শুনতে পায়, বোধগম্যতা থাকে না। তেমনি কাফিররা কুরআনের তিলাওয়াত শুনে ঠিকই, কিন্তু তার তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারে না।
صُمٌّۢ — তারা বধির; কারণ তারা আল্লাহর বাণী শুনলেও অন্তরে গ্রহণ করে না।
بُکۡمٌ — তারা মূক; তারা সত্য উচ্চারণ করে না, দাওয়াতও দেয় না।
عُمۡیٌ — তারা অন্ধ; সত্যকে দেখতে পায় না, কারণ কুফরের পর্দা তাদের চোখ ঢেকে রেখেছে।
فَهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ — অতএব তারা কিছুই বোঝে না। তাদের বিবেক-বুদ্ধি অচল হয়ে গেছে।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুফরকারীদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন একটি স্পষ্ট উপমার মাধ্যমে। তারা যেন সেই পশুর মতো, যার মালিক তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে কিছুই বোঝে না, কেবল শব্দ শুনতে পায়। ঠিক তেমনই, কাফিররা আল্লাহর কালাম শুনলেও তার মর্ম অনুধাবন করে না। তারা যেন শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টিশক্তি হারানো প্রাণী। মূলত, তাদের অন্তরের গ্রহণশক্তিই মরে গেছে।
১. কুফর অন্তরের অন্ধত্ব সৃষ্টি করে, ফলে মানুষ সত্য উপলব্ধি করতে পারে না।
২. শুধু কুরআন তিলাওয়াত শুনলে হবে না, বুঝে অনুসরণ করাই প্রকৃত ঈমানের প্রমাণ।
৩. যারা আল্লাহর বাণী প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থান পশুর চেয়েও অধম।
এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। তখন কুরাইশরা রাসূল (সা.)-এর দাওয়াত শুনেও তা গ্রহণ করছিল না। তারা কুরআনের শব্দ শুনলেও এর হেদায়াতকে বুঝত না, বরং কানে তালা দিয়ে রাখত। তাদের এই মানসিক অবস্থা তুলে ধরতেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
দলিল: তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৬; তাফসীর তাবারী, খণ্ড ২, আয়াত ১৭১-এর অধীনে।