সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১০ নং আয়াতের তাফসীর

١٠ - فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ مَّرَضٌ ۙ فَزَادَهُمُ اللّٰهُ مَرَضًا ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ ۬ۙ بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ
উচ্চারণ: ফী কুলুবিহিম মারদুং ফাযা-দা হুমুল্ল-হু মারদাও ওয়ালাহুম আযাবুন আলীমুম বি-মা কা-নু ইয়াকযিবু-ন।
অনুবাদ: তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যাবাদী।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ مَّرَضٌ
"فِیۡ" অর্থে এঁদের মধ্যে,
"قُلُوۡبِهِمۡ" অর্থে তাদের হৃদয়ে,
"مَّرَضٌ" অর্থে একটি রোগ
এখানে "মরায" বা রোগ দ্বারা আল্লাহর প্রতি সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ধর্মের প্রতি দ্বিধা বোঝানো হচ্ছে। এটি মন ও হৃদয়ের রোগ, যা মুনাফিকদের অন্তরে রয়েছে।

فَزَادَهُمُ اللّٰهُ مَرَضًا
"فَزَادَهُمُ" অর্থে তাদের রোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন
"اللّٰهُ" অর্থে আল্লাহ
"مَرَضًا" অর্থে আরও একটি রোগ
এখানে বলা হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস না রেখে, তাদের অন্তরের রোগ আরও গভীর হয়েছে, অর্থাৎ তারা আরও বেশি অবিশ্বাস ও সন্দেহে পড়ে গেছে এবং আল্লাহ তাদের এই অবস্থা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

وَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ
"وَ" অর্থে এবং,
"لَهُمۡ" অর্থে তাদের জন্য,
"عَذَابٌ" অর্থে যন্ত্রণা বা শাস্তি,
"اَلِیۡمٌۢ" অর্থে যন্ত্রণাদায়ক
এখানে বলা হচ্ছে যে, তাদের এই অবস্থা ও বিশ্বাসহীনতার কারণে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ
"بِمَا" অর্থে যেহেতু,
"کَانُوۡا" অর্থে তারা ছিল,
"یَکۡذِبُوۡنَ" অর্থে মিথ্যা বলছিল
এখানে বলা হচ্ছে যে, তারা যেভাবে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি মিথ্যা বলেছে এবং তাদের বিশ্বাসকে অস্বীকার করেছে, তার কারণেই তাদের এই রোগ এবং শাস্তি।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এ আয়াতটি মুনাফিকদের বা দ্বিচারী মানুষের অন্তরের অবস্থা বর্ণনা করছে। যারা বাইরেও মুসলিমদের মতো আচরণ করে কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস থাকে না। তাদের অন্তরে এমন একটি রোগ থাকে যা তাদের আল্লাহ এবং ইসলাম থেকে দূরে রাখে, এবং তারা নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। এই মনের রোগের কারণে তারা ইসলামের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারে না, তাদের অন্তরে সন্দেহ ও দ্বিধা বিরাজ করে।

আল্লাহ তাদের এই রোগ বাড়িয়ে দেন, অর্থাৎ তারা একসময় আরো বেশি অবিশ্বাসী হয়ে যায় এবং আল্লাহ তাদের এই অবস্থা থেকে বের হতে সাহায্য করেন না, কারণ তারা সত্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।

এবং এর পরিণতি হবে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তাদের মিথ্যা কথা, অস্বীকৃতি এবং দ্বিচারিতা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তাই তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত।


আয়াতের শিক্ষা

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসহীনতা: এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, অন্তরে যদি বিশ্বাসের রোগ থাকে, তবে তা ধীরে ধীরে আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে। অন্তরের এই রোগ আল্লাহ দ্বারা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি এক সময় দুনিয়াতে তার পরিণতি দেখে।
মিথ্যা ও দ্বিচারিতা: মুনাফিকরা মিথ্যা বলে এবং দ্বিচারিতা করে, কিন্তু তারা জানে না, আল্লাহ তাদের সকল কার্যকলাপ জানেন এবং তারা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্বাসের দৃঢ়তা: একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার বিশ্বাস এবং সততা। মুসলমানদের উচিত নিজের অন্তরকে শক্তিশালী এবং নিষ্কলঙ্ক রাখা, যাতে কোনো মিথ্যা বা সন্দেহ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে দুর্বল করতে না পারে।
পরিণতির ব্যাপারে সতর্কতা: এই আয়াতটি আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, যেসব ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যা বলেন এবং দ্বিচারিতা প্রদর্শন করেন, তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি মদিনায় নাযিল হয়েছিল এবং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মুনাফিকদের সম্পর্কে সতর্কতা দেয়া। মুনাফিকরা ইসলামের বাহ্যিক রীতিনীতি অনুসরণ করতো, কিন্তু তাদের অন্তরে ইসলাম ছিল না। তারা মুসলমানদের সাথে একীভূত হয়ে ইসলামের খাতিরে মিথ্যা বলত এবং নিজেদের অস্বীকার করতে থাকতো। আল্লাহ তাদের এই দ্বিচারিতার শাস্তি ঘোষণা করেছেন এবং তাদের অন্তরের অবস্থা বর্ণনা করেছেন।


তাফসীরে: