আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ
যারা যখনই কোনো বিপদে পড়ে —
এই অংশে সেই মুমিনদের কথা বলা হচ্ছে যারা দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন দুঃখ, কষ্ট ও দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। ‘মুসীবাহ’ বলতে বোঝানো হয়েছে ক্ষতি, বিপদ, মৃত্যু, বা যেকোনো ধরনের কষ্টকর পরিস্থিতি।
قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ
তারা বলে: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য —
বিপদ আসার পর তারা দুঃখে ভেঙে না পড়ে, বরং নিজেদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তাদের অস্তিত্ব, জীবন, সম্পদ সবই আল্লাহর, এবং তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরীক্ষা করবেন।
وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ
এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী —
তারা বিশ্বাস রাখে, সবকিছু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে। এই বিশ্বাস তাদের ধৈর্য ও আত্মশক্তি জোগায়, কারণ তারা জানে, দুনিয়া চূড়ান্ত গন্তব্য নয়।
এই আয়াতে এমন মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যারা বিপদের সময় আতঙ্কিত হয় না, বরং ধৈর্য ধরে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। তারা জানে, জীবনে যা ঘটে তা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয় এবং প্রতিটি কষ্টের পেছনে রয়েছে কোনো হিকমত বা প্রজ্ঞা। তারা ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ পাঠ করে নিজেদের ঈমান ও ধৈর্যের পরিচয় দেয়।
বিপদে ধৈর্য ধরে আল্লাহর স্মরণ করা মুমিনের পরিচয়।
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” শুধু মুখের কথা নয়, এটি একটি বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের চিহ্ন।
দুনিয়ার সব কিছুই আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তিনিই সর্বশেষ গন্তব্য।
বিপদের সময় চিত্তের প্রশান্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ভরসা ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন।
এই আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াত “وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ…”-এর পরপরই এসেছে, যেখানে আল্লাহ মুমিনদের পরীক্ষার ঘোষণা দেন। এই আয়াতে সেই মুমিনদের পুরস্কার এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, যারা সেই পরীক্ষাগুলোতে ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান অটুট রাখে। বিশেষ করে যাদের প্রিয়জনের মৃত্যু হয়, কিংবা তারা যেকোনো বড় বিপদের সম্মুখীন হয়, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।