আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ —
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব। এখানে “নাবলুয়ান্নাকুম” শব্দে জোর দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ পরীক্ষা অবশ্যম্ভাবী এবং নিশ্চিতভাবে হবে। আল্লাহ বান্দাদের ঈমান যাচাই করতে পরীক্ষায় ফেলেন।
بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ —
ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা। অর্থাৎ, জীবনে মাঝে মাঝে নিরাপত্তাহীনতা ও খাদ্য সংকট দেখা দেবে, যা মানুষের জন্য একধরনের পরীক্ষা।
وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ —
ধন-সম্পদের হ্রাস। ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসান, আয় হ্রাস বা বিপর্যয়ের মাধ্যমে মানুষকে ধৈর্যের পরীক্ষায় ফেলা হয়।
وَالْأَنفُسِ —
জীবনের ক্ষতি, অর্থাৎ মৃত্যু বা প্রিয়জনদের হারানো। এটি সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি।
وَالثَّمَرَاتِ —
ফল-ফসল বা জীবিকার উৎসে ক্ষতি। কৃষকের ফসল, বণিকের পণ্য কিংবা উপার্জনের পথ সংকুচিত হওয়া, এগুলোও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষার মাধ্যম।
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ —
আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। এই অংশে আল্লাহ তাআলা ধৈর্যধারণকারীদের জন্য প্রতিদান ও সান্ত্বনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, যারা পরীক্ষায় ধৈর্য ধরে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, জীবনে নানাবিধ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে — যেমন ভয়, খাদ্যাভাব, সম্পদ ও জীবনহানী, এবং জীবিকার ঘাটতি। এগুলো ঈমানদারদের ধৈর্য যাচাইয়ের উপায়। কিন্তু সেই সকল মানুষকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যারা এই পরীক্ষাগুলোতে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতা বজায় রাখে। আয়াতটি আমাদের শেখায় যে জীবন চ্যালেঞ্জপূর্ণ হলেও ধৈর্যই ঈমানের পরিচয়।
জীবন সবসময় মসৃণ নয়; পরীক্ষার মধ্য দিয়েই ঈমান প্রমাণিত হয়।
ভয়, ক্ষুধা, ক্ষতি ও মৃত্যুর সময় ধৈর্য রাখা জরুরি।
ধৈর্যশীলরা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদা পান।
প্রতিকূলতায় ধৈর্য ও ঈমান বজায় রাখাই প্রকৃত সফলতা।
বিপদকে পরীক্ষার দৃষ্টিতে দেখা উচিত, না যে এটি শাস্তি।
এই আয়াতটি সেই সময় নাযিল হয় যখন মুসলমানরা যুদ্ধ, বয়কট, ও জীবনের নানা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছিল। উহুদের যুদ্ধ, কাফিরদের নির্যাতন, খাদ্যসংকট এবং হিজরতের কষ্ট — সবই ছিল এই পরীক্ষার অংশ। আল্লাহ তাদের বলে দিলেন, এই কষ্টগুলো হলো তাঁর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, যাতে ঈমানদারদের ধৈর্য যাচাই হয়। এবং যারা ধৈর্য ধরবে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।