আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ —
তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা বলছেন, তোমরা যদি ইবাদতের মাধ্যমে, দোয়া, জিকির, এবং আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করো, তাহলে তিনিও দয়া, সাহায্য ও রহমতের মাধ্যমে তোমাদের স্মরণ করবেন। এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি যা একজন বান্দা ও তার প্রভুর মধ্যকার গভীর সম্পর্ক নির্দেশ করে।
وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ —
আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আল্লাহ চাইছেন তাঁর দান, নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য বান্দারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক, যাতে তারা আরো বেশি নিয়ামত লাভ করতে পারে।
وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ —
আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না। এখানে “কুফর” মানে কেবল অস্বীকার নয়, বরং আল্লাহর নিয়ামতের অবমূল্যায়ন, অবজ্ঞা করা বা অন্য কারো প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াকেও বোঝানো হয়েছে। এটি কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
এই আয়াতটি একজন মুমিন বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্কের সারসংক্ষেপ। আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন যেন তারা তাঁকে সর্বদা স্মরণ করে, কারণ তিনি বান্দাদের প্রতিফলন দিয়ে থাকেন। তাঁর স্মরণে রয়েছে শান্তি, শক্তি ও সঠিক দিকনির্দেশনা। পাশাপাশি, বান্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা তাঁর নিয়ামতের যথাযথ কদর করে এবং সঠিক পথে থাকে।
আল্লাহর স্মরণে রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি ও সাফল্য।
যে যত বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহও তাকে তত বেশি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখেন।
কৃতজ্ঞতা আল্লাহর আরও নিয়ামত পাওয়ার মাধ্যম।
অকৃতজ্ঞতা বা অবহেলা করলে নিয়ামত কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
জীবন পরিচালনায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্যের জন্য তাঁর স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা অপরিহার্য।
এই আয়াতটি মূলত বান্দার আত্মিক উন্নয়ন ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বানস্বরূপ নাজিল হয়েছিল। ইমাম কুরতুবী রহ. ও অন্যান্য তাফসীরবিদগণ উল্লেখ করেন, এটি এমন এক সময়ে নাজিল হয়েছিল যখন মুসলমানদের মনোবল দৃঢ় করার প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে শিক্ষা দিলেন যেন তারা তাঁর প্রতি মনোযোগী হয়, যাতে তিনি তাদের সাহায্য করেন, বিজয় দেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফল করেন।