আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
تِلۡکَ اُمَّۃٌ قَدۡ خَلَتۡ —
“ওই এক জাতি ছিল, যা অতীত হয়ে গেছে।”
এখানে ‘ওই এক জাতি’ বলতে ইব্রাহীম (আ.), ইসহাক (আ.), ইসমাঈল (আ.), ইয়াকুব (আ.) এবং তাঁদের বংশধরদের বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ জানাচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের আমলের দ্বারা সন্মানিত হয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাঁরা অতীত হয়ে গেছেন। এখন আর কেউ তাঁদের পরিচয় দিয়ে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারবে না।
لَهَا مَا کَسَبَتۡ —
“তাদের জন্য রয়েছে তাদের কর্মফল।”
তারা যা কাজ করেছে, সে অনুযায়ী তারা প্রতিদান পাবে। তাদের আমল তাদের জন্য।
وَ لَکُمۡ مَّا کَسَبۡتُمۡ —
“আর তোমাদের জন্য রয়েছে তোমাদের কর্মফল।”
তোমরা যা করবে, তার জন্যই জবাবদিহি করবে। কোনো জাতি বা পিতৃপুরুষের পরিচয়ে কেউ মুক্তি পাবে না — বরং নিজ নিজ আমলের ওপরই নির্ভর করবে পরিণাম।
وَ لَا تُسۡـَٔلُوۡنَ عَمَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ —
“তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না তারা কী করত।”
তাদের কাজের জন্য তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, আখেরাতে ব্যক্তি নিজের আমলেই হিসাব দেবে — পূর্বপুরুষ বা অন্য কারো উপর নির্ভর করে নয়।
এই আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতগুলোর একটি উপসংহার স্বরূপ। এখানে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করছেন, ইব্রাহীম (আ.) এবং তাঁর সন্তানদের ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করা অর্থহীন। কারণ, তাদের আমল তাদের নিজস্ব বিষয় ছিল, আর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের নিজ নিজ আমল অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হবে। ইসলামে ব্যক্তি দায়বদ্ধতা একটি মৌলিক নীতি — কেউ অন্য কারও পাপ বা পূণ্য বহন করবে না।
আখেরাতে মুক্তি পেতে হলে নিজে ভালো আমল করতে হবে, কেবল বংশগৌরবে কাজ হবে না।
আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের কর্ম অনুযায়ী বিচার পাবেন।
অতীত নবী-রাসূল বা নেককারদের অনুসরণ করতে হলে তাদের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে, কেবল মুখে দাবী করে নয়।
ইসলাম আত্মিক দায়িত্ববোধ ও ব্যক্তিগত জবাবদিহিতার ধর্ম।
ইয়াহুদীরা দাবি করতো, তারা ইব্রাহীম (আ.)-এর অনুসারী এবং এই বংশের উত্তরাধিকারী বলে তারা নিজে থেকেই সঠিক পথে আছে, এমনকি তারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অস্বীকার করলেও। এই আয়াত সেই ভুল দাবিকে নাকচ করে দেয়। আল্লাহ জানিয়ে দেন, শুধু বংশের পরিচয় কোনো কাজের নয়, বরং প্রকৃত আমল ও ঈমানই মুক্তির উপায়।