আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
اَمۡ کُنۡتُمۡ شُهَدَآءَ اِذۡ حَضَرَ یَعۡقُوۡبَ الۡمَوۡتُ —
“তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের কাছে মৃত্যু উপস্থিত হলো?”
এই প্রশ্নমূলক বাক্যটি একটি ভিন্ন জাতির দাবির খণ্ডনস্বরূপ এসেছে। ইয়াহুদীরা দাবি করতো, ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর বংশধরেরা কেবল তাদের ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু এখানে আল্লাহ বলছেন, তারা নিজেরাও তো উপস্থিত ছিল না ইয়াকুবের মৃত্যুশয্যায়। তাহলে তারা কিভাবে জানে?
اِذۡ قَالَ لِبَنِیۡهِ مَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِیۡ —
“যখন তিনি তাঁর সন্তানদের বললেন, ‘আমার পর তোমরা কাকে উপাসনা করবে?’”
মৃত্যুর সময় ইয়াকুব (আ.) তাঁর সন্তানদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি রাখলেন — উপাসনার বিষয়টি। এটা বোঝায়, ঈমান ও তাওহীদের শিক্ষা সন্তানদের মধ্যে প্রোথিত করাই একজন মুসলিম পিতার প্রথম দায়িত্ব।
قَالُوۡا نَعۡبُدُ اِلٰهَکَ وَ اِلٰـهَ اٰبَآئِکَ اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ —
“তারা বলল, ‘আমরা আপনার উপাস্য এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য’”
এই উত্তরটি ছিল স্পষ্টভাবে তাওহীদের ঘোষণা। ইয়াকুবের সন্তানরা জানাল যে তারা কোনো নতুন ধর্ম গ্রহণ করেনি, বরং পূর্বপুরুষদেরই একত্ববাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দ্বীনের অনুসারী ছিল।
اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚۖ وَّ نَحۡنُ لَهٗ مُسۡلِمُوۡنَ —
“(তিনি) এক আল্লাহ, আর আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।”
তারা শুধু এক আল্লাহর উপাসনার কথা বলেনি, বরং নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন 'মুসলিম' হিসেবে — যারা নিজেদের ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করেছে।
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করছেন যে, ইয়াকুব (আ.)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর সন্তানদের মধ্যে ছিল সম্পূর্ণরূপে তাওহীদের ভিত্তিভিত্তিক ঈমান। তারা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিল এবং ইসলামকেই গ্রহণ করেছিল। এটি প্রমাণ করে যে, ইব্রাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ও ইয়াকুব (আ.)— সকলেই মুসলিম ছিলেন এবং তাঁদের বংশধররাও ইসলামকেই ধারণ করেছিলেন। কাজেই যারা তাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন মত প্রতিষ্ঠা করে, তারা প্রকৃত অনুসারী নয়।
সন্তানদের সঠিক আকীদা দিয়ে গড়ে তোলা পিতামাতার প্রধান দায়িত্ব।
মৃত্যুর পূর্বে ঈমানের অবস্থান নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়, বরং পূর্ববর্তী সব নবীদের আদর্শিক ধারাবাহিকতা।
মুসলিম পরিচয় মানে আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ।
এই আয়াত পূর্ববর্তী আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতায় এসেছে, যেখানে ইব্রাহীম (আ.) ও ইয়াকুব (আ.)-এর ইসলামিক আদর্শ ও তাওহীদের পথ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছিল। ইয়াহুদীরা নিজেদেরকে ইয়াকুব (আ.)-এর অনুসারী বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে ইয়াকুব (আ.) ইসলামের পথের অনুসারী ছিলেন। এই আয়াত সেই দাবির ভিত্তিকে নাকচ করে দেয় এবং মুসলিমদের প্রকৃত আদর্শিক উত্তরসূরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।