আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ مَنۡ یَّرۡغَبُ عَنۡ مِّلَّۃِ اِبۡرٰهٖمَ —
“আর কে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইব্রাহীম (আ.)-এর জীবনপদ্ধতি থেকে?”
এখানে ‘মিল্লাত’ শব্দের অর্থ জীবনধারা বা দীন। ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন তাওহীদের পতাকাবাহী, তাঁর পথে চলা মানেই আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ। এই পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানেই গোমরাহির পথ গ্রহণ করা।
اِلَّا مَنۡ سَفِهَ نَفۡسَهٗ —
“শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি, যে নিজের সত্তাকে মূর্খতা ও ধ্বংসের পথে চালিত করে।”
নিজের উপর জুলুম করে, জ্ঞান ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে যে ইব্রাহীম (আ.)-এর পথ পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত মূর্খ।
وَ لَقَدِ اصۡطَفَیۡنٰهُ فِی الدُّنۡیَا —
“আর অবশ্যই আমরা তাঁকে দুনিয়াতে বাছাই করে নিয়েছি।”
আল্লাহ তাআলা ইব্রাহীম (আ.)-কে তাঁর প্রিয় বান্দা হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁকে ‘خلیل الله’ (আল্লাহর প্রিয় বন্ধু) মর্যাদা দিয়েছেন।
وَ اِنَّهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ لَمِنَ الصّٰلِحِیۡنَ —
“এবং নিশ্চয়ই তিনি পরকালেও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।”
ইব্রাহীম (আ.) শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও উচ্চ মর্যাদা প্রাপ্ত হবেন। তিনি নবীদের সারিতে সম্মানিত ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন, ইব্রাহীম (আ.)-এর জীবনধারা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কেবল সেই ব্যক্তি, যে মূর্খ এবং নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে আনে। কারণ ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন আল্লাহর নির্বাচিত নবী, যিনি তাওহীদের একান্ত ধারক ও বাহক ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল ঈমান, একত্ববাদ, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের প্রকৃত উদাহরণ। অতএব তাঁর পথ থেকে বিচ্যুতি মানে হেদায়াতের পথ থেকে সরে যাওয়া।
ইব্রাহীম (আ.)-এর জীবনপথ তাওহীদের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পথ পরিত্যাগ করা মানে নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে আনা।
যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চায়, তাদের ইব্রাহীম (আ.)-এর পথ অনুসরণ করা উচিত।
সৎকর্মশীলদের মর্যাদা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে নিশ্চিত।
এই আয়াতটি মক্কী মুশরিক, ইয়াহুদি ও নাসারাদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়, যারা নিজেদের ইব্রাহীম (আ.)-এর অনুসারী দাবি করতো অথচ তাঁর প্রকৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত ছিল। আয়াতটি তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন করে জানিয়ে দেয় যে, ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন খাঁটি মুসলিম এবং তাঁর পথই হিদায়াতের একমাত্র সঠিক পথ।