সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১২৮ নং আয়াতের তাফসীর

١٢٨ - رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ ۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
উচ্চারণ: রাব্বানা ওয়াজ্‌আল্‌না মুসলিমাইনি লাকা, ওয়া মিন্‌ জুররিয়্যাতিনা উম্মাতান মুসলিমাতান লাকা, ওয়া আরিনা মানাসিকানা, ওয়াতুব্‌ ‘আলাইনা; ইন্নাকা আনতা তাওয়্বাবুর রাহীম।
অনুবাদ: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ
হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এমন বান্দা করে দিন যারা সম্পূর্ণভাবে আপনার অনুগত। 'মুসলিমাইনি' অর্থ—দুইজন মুসলিম, অর্থাৎ ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ.) নিজেদের জন্য দোয়া করছেন।

وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ
তাঁরা চান তাঁদের বংশধরদের মধ্য থেকেও এমন একটি জাতি তৈরি হোক যারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর আনুগত্য করবে।

وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا
হজ এবং ইবাদতের বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতি (মাসনুন আমল) আমাদেরকে দেখিয়ে দিন যেন আমরা সঠিকভাবে তা পালন করতে পারি।

وَ تُبۡ عَلَیۡنَا
আর আমাদের ত্রুটি ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আমাদেরকে তওবা করার তাওফিক দিন।

اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
নিশ্চয়ই আপনি বারবার তওবা কবুলকারী এবং পরম দয়ালু।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ.) তাদের আত্মসমর্পণের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন। তারা চাচ্ছেন শুধু নিজেরাই নয়, তাদের উত্তরসূরিরাও যেন আল্লাহর আনুগত্যে আত্মসমর্পণ করে। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন যেন ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি দেখিয়ে দেওয়া হয় এবং যদি কোনো ভুল হয়ে যায়, তা যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এই আয়াত শিক্ষা দেয় যে, আনুগত্য ও ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তা হতে হবে তাঁর নির্দেশ অনুসারে।


আয়াতের শিক্ষা

  • একজন প্রকৃত মুসলমান সর্বদা আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে চায়।

  • সন্তানদের দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দোয়া করা নবী ইব্রাহীমের সুন্নত।

  • ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি শিখে তা পালন করা জরুরি।

  • আল্লাহর দরজায় ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর দয়ায় ভরসা রাখাই ঈমানদারের গুণ।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ.)-এর দোয়ার অংশ, যা তাঁরা কাবা নির্মাণের সময় করেছিলেন। এতে তাঁদের অন্তরের দীনী তৃষ্ণা, আনুগত্য, ভবিষ্যৎ উম্মাহ নিয়ে চিন্তা ও আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে।


তাফসীরে: