আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمۡ اٰمِنُوۡا بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ
আর যখন তাদের বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা বিশ্বাস করো’।
এটি ইহুদিদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, যারা শেষ নবীর প্রতি বিশ্বাস আনতে অস্বীকার করতো।
قَالُوۡا نُؤۡمِنُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا
তারা বলে, ‘আমরা কেবল আমাদের উপর নাজিলকৃত কিতাবেই ঈমান রাখি’।
তারা দাবি করে যে, শুধু তাওরাতই যথেষ্ট, নতুন কিতাবের প্রয়োজন নেই।
وَ یَکۡفُرُوۡنَ بِمَا وَرَآءَهٗ
আর তারা যা এসেছে তার পরে, তা অস্বীকার করে।
অর্থাৎ, তারা কুরআনকে অস্বীকার করে, যদিও তা তাওরাতের সত্যতা প্রমাণ করে।
وَ هُوَ الۡحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمۡ
অথচ সেটি সত্য এবং তাদের কিতাবের সত্যতাকে সমর্থন করে।
এটি কুরআনের বৈশিষ্ট্য: পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর সত্য অংশকে সমর্থন করা।
قُلۡ فَلِمَ تَقۡتُلُوۡنَ اَنۡۢبِیَآءَ اللّٰهِ مِنۡ قَبۡلُ
বল, ‘তবে কেন তোমরা পূর্বে আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?’
তাদের ভণ্ডামি প্রকাশ করা হচ্ছে—তারা নবীদের বিশ্বাসের দাবিদার, অথচ তাদের অনেক নবীকেই হত্যা করেছে।
اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
যদি সত্যিই তোমরা ঈমানদার হও, তবে নবীদের প্রতি এই শত্রুতা কেন?
এই আয়াতে ইহুদিদের এক গোপন সত্য উন্মোচন করা হয়েছে। তারা দাবি করতো, তারা কেবল তাদের উপর নাজিলকৃত কিতাবেই বিশ্বাস রাখে। কিন্তু বাস্তবে, তারা নতুন কোনো ওহী ও নবীর আগমনে হিংসা করত এবং সত্য অস্বীকার করত। অথচ কুরআন ঠিক তাদের কিতাব তাওরাতকেই সমর্থন করে। এরপরও তারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মানতে অস্বীকার করেছিল, বরং অতীতে তারা বহু নবীকেও হত্যা করেছিল। এটা প্রমাণ করে, তারা প্রকৃত মুমিন নয়।
কেবল নিজের সুবিধাজনক অংশ মেনে নেওয়া আসল ঈমান নয়।
সত্য প্রত্যাখ্যান করার পেছনে হিংসা ও অহংকার বড় কারণ।
যারা সত্যিকারের মুমিন, তারা সকল নবীকে মানে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়—ইহুদিরা নবী হত্যার মতো ভয়ংকর অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।
মুমিনদের উচিত প্রত্যেক আসমানী কিতাব এবং নবীর প্রতি বিশ্বাস রাখা।
এই আয়াতটি মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে চেনা সত্ত্বেও, কুরআনকে মানতে অস্বীকার করে। কারণ তাদের হিংসা ছিল যে নবী কেন তাদের জাতি থেকে নয়। অতীতে তারা হযরত যাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.)-সহ বহু নবীকে হত্যা করেছিল। এ আয়াত সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়।