সূরা: ১. আল-ফাতিহা (اَلْفَاتِحَةِ)
নং আয়াতের তাফসীর

٤ - مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ
উচ্চারণ: মালীকি ইয়াওমিদ দী-ন।
অনুবাদ: বিচার দিবসের মালিক।

তাফসীর

১. আয়াতের প্রতিটি অংশের বিস্তারিত তাফসীর

مٰلِكِ
"مَالِك" শব্দটি "মালিক" থেকে এসেছে, যার অর্থ মালিক, অধিকারী, বা হুকুমদার
এটি আল্লাহর একটি গুণ যা বোঝায় যে, আল্লাহর সর্বশেষ কর্তৃত্ব রয়েছে, বিশেষ করে বিচার ও শাস্তির দিন—যেদিন মানুষ তার কাজের হিসাব দিবে।
এতে আল্লাহর সর্বমহান কর্তৃত্ব এবং একমাত্র মালিকানা বোঝানো হয়েছে, এবং এটি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।

یَوْمِ
"يَوْمِ" শব্দটি আরবী ভাষায় দিন বা যে দিনটি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
এটি "সেই দিনের" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা হল ইতিহাসের শেষ দিন, যখন সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বিচার হবে

الدِّینِ
"الدِّینِ" শব্দটি "দীন" থেকে এসেছে, যার অর্থ বিচার, প্রতিফল, ধর্ম, বা অন্তিম হিসাব
এখানে "الدِّینِ" দ্বারা বুঝানো হচ্ছে বিচারের দিন, যেদিন আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির বিচার করবেন, এবং মানুষের সব আমল ও কাজের হিসাব নেয়া হবে।
এটি সেই দিন, যেদিন মানুষকে তাদের কাজের ফল দেওয়া হবে—সত্য, মিথ্যা, সৎ, অসৎ—সবকিছুর হিসাব হবে।


২. আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতটি সূরা ফাতিহার অংশ, যা আল্লাহর বিচারের ক্ষমতা ও মালিকানা সম্পর্কে জানান দেয়।
"مٰلِكِ یَوْمِ الدِّینِ" দ্বারা আল্লাহকে বিচার দিবসের একমাত্র মালিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই আয়াতটি মানুষের মনে আখিরাতের দিন এবং বিচার দিবসের গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলে।
এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মালিক নেই যে বিচার করবে।
সেই দিন আল্লাহই একমাত্র বিচারক, এবং তাঁর বিচার সঠিক ও ন্যায্য হবে, যা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।


৩. আয়াতের শিক্ষা

আখিরাতের দিন সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেখানে আমাদের সকল কাজের হিসাব হবে।
● আমরা যদি আমাদের জীবনে সঠিক ও সৎ পথে চলতে চাই, তবে আমাদের উচিত আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
বিচার দিবসের মালিক আল্লাহ, এবং সেই দিন কোন কিছুই গোপন থাকবে না। আমাদের উচিত ভালো কাজ করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সব সৎ এবং অসৎ কাজের ফল দেওয়া হবে।
● এই আয়াতটি আমাদেরকে আখিরাতের দিন বিশ্বাস ও প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে।


৪. নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াতটি সূরা ফাতিহার অংশ হিসেবে মক্কায় অবতীর্ণ।
সূরা ফাতিহা মূলত আল্লাহর প্রশংসা, দয়া, কর্তৃত্ব এবং আখিরাতের সত্যের প্রতি বিশ্বাসী করার জন্য নাযিল হয়েছিল।
এই আয়াতটি মানুষের মনকে আখিরাতের প্রতি আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে, যাতে তারা আল্লাহর বিচার দিবস মনে রেখে সৎ ও ঈমানদার জীবন যাপন করে।
এটি বিশেষভাবে মানবজাতির জন্য নির্দেশনা যে, তাদের আমল সঠিক হতে হবে এবং বিচারের দিন প্রস্তুত থাকতে হবে।


তাফসীরে: