আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর:
وَإِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ —
আর যদি তারা তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়
এখানে "عَزَمُوا" (আজামূ) শব্দের অর্থ হচ্ছে 'দৃঢ়ভাবে সংকল্প করা' বা 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া'। অর্থাৎ, যদি ঈলার চার মাস পার হয়ে যায় এবং স্বামী স্ত্রীকে গ্রহণ না করে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটি কার্যকর হবে। এটি স্বামীর একটি স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত—যার দ্বারা দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
فَإِنَّ اللّٰهَ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ —
তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শুনেন এবং সব জানেন
এই বাক্যটি দু’টি দিক থেকে সতর্ক করে:
অর্থাৎ, যদি কেউ তালাকের সিদ্ধান্তকে ব্যবহার করে স্ত্রীকে কষ্ট দেয় বা অন্যায় করে, তাহলে আল্লাহর দৃষ্টিতে তা গোপন নয়।
এই আয়াতটি আগের আয়াত (২:২২৬) এর ধারাবাহিক অংশ। পূর্বের আয়াতে স্বামীর জন্য চার মাস সময় নির্ধারণ করা হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এই আয়াতে বলা হয়েছে, যদি সেই সময়সীমা শেষে স্বামী তালাক দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সে তালাক কার্যকর হবে—কিন্তু আল্লাহর সামনে তার এই সিদ্ধান্ত দায়বদ্ধ থাকবে।
আল্লাহর দুটি গুণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে:
সামীউন (সব শুনেন)
আলীম (সব জানেন)
এটি বোঝায় যে, কেউ যদি মন থেকে তালাক না চেয়ে শুধু ক্ষতির জন্য স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে তা আল্লাহর কাছে গোপন নয়। আবার যদি স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ না থাকে এবং প্রকৃত প্রয়োজনেই তালাক দেয়, তাহলে আল্লাহ সব বুঝেন এবং সুবিচার করবেন।
এই আয়াত পূর্ববর্তী আয়াতের পরিপূরক। জাহিলি যুগে অনেক স্বামী স্ত্রীদের অধিকার হরণ করত—না তালাক দিত, না সম্পর্ক বজায় রাখত। ইসলাম এই অনিশ্চয়তা দূর করে চার মাস সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এরপর স্বামীকে হয় স্ত্রীকে গ্রহণ করতে হয়, নয় তালাক দিতে হয়। এই আয়াতে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর শ্রবণ ও জ্ঞানের কথা বলে এ সিদ্ধান্তকে জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছেন।
দলিল:
তাফসীর ইবন কাসীর
তাফসীর আত-তাবারী, আয়াত ২:২২৭