আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর:
لِلَّذِیۡنَ یُؤۡلُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِهِمۡ —
যারা তাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকার শপথ করে
এটি ‘ঈলা’ নামে পরিচিত। ঈলা হল এমন এক শপথ যেখানে একজন স্বামী আল্লাহর নামে শপথ করে বলে—সে তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে না। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয়ে থাকে, এবং এটি ইসলামী শরিয়তের আলোকে নিয়ন্ত্রিত।
تَرَبُّصُ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ —
তাদের জন্য অপেক্ষার মেয়াদ চার মাস
শরিয়তে নির্ধারিত হয় যে, ঈলার শপথকারী স্বামী সর্বোচ্চ চার মাস পর্যন্ত তার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে পারে। এর মধ্যে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে—সহবাসে ফিরে আসবে, নাকি তালাক দিবে। চার মাস পার হয়ে গেলে যদি সে ফিরে না আসে, তাহলে স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়।
فَإِنْ فَاءُوا —
অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে
অর্থাৎ, যদি তারা তাদের শপথ ভঙ্গ করে এবং স্ত্রীদের কাছে ফিরে আসে, সহবাসে সম্মত হয়—তাহলে...
فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ —
তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু
আল্লাহ তাআলা এমন শপথ ভঙ্গ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন না বরং এ ক্ষেত্রে ক্ষমা ও দয়ার কথা বলেন, কারণ এটি দাম্পত্য জীবন রক্ষা করার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
এই আয়াতটি “ঈলা” নামক এক দাম্পত্য শপথসংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে। এটি এমন একটি শপথ যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় আল্লাহর নামে শপথ করে। ইসলামে এমন শপথের সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে চার মাস। এই সময়ের মধ্যে স্বামীকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সে স্ত্রীকে গ্রহণ করবে নাকি তালাক দিবে।
এই আয়াতে মূলত দাম্পত্য জীবনের ভারসাম্য রক্ষা এবং নারীর অধিকারকে কেন্দ্র করে ইসলামী নীতিমালাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্ত্রীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং অন্যায়। এ কারণে চার মাস সময়সীমা বেঁধে দিয়ে স্বামীকে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এই আয়াত ঈলা সম্পর্কিত একটি প্রচলিত প্রথা সংস্কার করার জন্য নাযিল হয়। জাহিলি যুগে স্বামীরা শপথ করে দীর্ঘ সময় স্ত্রীদের কাছ থেকে দূরে থাকতো, ফলে স্ত্রীদের জীবন হয়ে উঠত অনিশ্চিত ও কষ্টকর। তখন ইসলামে এই সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়—চার মাস। এর বেশি হলে বিচারকের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
দলিল:
ইবন কাসীর
তাফসীর আত-তাবারী, আয়াত ২:২২৬