আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَ لَا تَجۡعَلُوا اللّٰهَ عُرۡضَۃً لِّاَیۡمَانِکُمۡ
তোমরা আল্লাহর নামকে তোমাদের কসমের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করো না — অর্থাৎ এমন কসম করো না যার কারণে নেক কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। যেমন: “আল্লাহর কসম, আমি ওর সাথে আর কখনো কথা বলবো না।” এভাবে আল্লাহর নামে অপ্রয়োজনীয় কসম করা হারাম।
اَنۡ تَبَرُّوۡا
যাতে তোমরা সৎ কাজ করতে না পারো — কসম করে কেউ যদি দান বা সদ্ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, সেটা অনুচিত।
وَ تَتَّقُوۡا
এবং আল্লাহভীতি অবলম্বন করতে না পারো — কোনো কসম আল্লাহভীতিকে বাধা দিলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
وَ تُصۡلِحُوۡا بَیۡنَ النَّاسِ
এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে না পারো — কসম এমন কিছুতে যেন না হয়, যার ফলে দুই ভাইয়ের মধ্যে মিল-মিমাংসা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন — তুমি কী বলছো, কী উদ্দেশ্যে বলছো, সবই আল্লাহর জ্ঞানে আছে।
এই আয়াত মানুষকে সতর্ক করে দিচ্ছে যেন তারা আল্লাহর নামে অহেতুক বা অন্যায়ভাবে শপথ না করে। কেউ যদি রাগের মাথায় কসম করে বসে, যেমন “আমি আর দান করবো না” বা “আমি ওর সাথে আর কথা বলবো না”— তাহলে সে আল্লাহর নামকে সৎ কাজের প্রতিবন্ধক বানাচ্ছে। ইসলাম কসমের অপব্যবহার সমর্থন করে না, বরং সৎকাজ, তাকওয়া এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে মানুষকে উৎসাহিত করে।
আল্লাহর নামে কসম অতি গম্ভীর বিষয়, তা হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
কসম এমন হতে হবে, যাতে সৎ কাজ বা মানুষের কল্যাণে বাধা না হয়।
আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন, তাই মিথ্যা বা অন্যায় কসম এড়িয়ে চলা জরুরি।
মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপন করা, সেটি কসমের অজুহাতে বন্ধ করা উচিত নয়।
কিছু সাহাবি রাগ করে স্ত্রী বা আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কসম করতেন। যেমন, "আল্লাহর কসম, আমি তাকে সাহায্য করবো না" বা "তার সাথে আর কথা বলবো না।" তখন এই আয়াত নাযিল হয়, যাতে বলা হয়: কসম করে কোনো সৎ কাজ বা মীমাংসা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে সেই কসম ভেঙে ফিদইয়া দিয়ে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।