আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
نِسَآؤُکُمۡ حَرۡثٌ لَّکُمۡ
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র — এখানে "শস্যক্ষেত্র" দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে সন্তান উৎপাদনের স্থান, অর্থাৎ স্ত্রীকে সম্মানের সাথে দাম্পত্য জীবনে গ্রহণ করা।
فَاۡتُوۡا حَرۡثَکُمۡ اَنّٰی شِئۡتُمۡ
সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেমনভাবে ইচ্ছা প্রবেশ করো — সহবাসের অবস্থান বা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এর মানে কোনো অশ্লীলতা বা হারাম কাজ অনুমোদন নয়; বরং স্বাভাবিক পন্থায় বিভিন্ন দিক থেকে সহবাস বৈধ।
وَ قَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ
নিজেদের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করো — উত্তম আচরণ, দোয়া ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ বোঝায়, যাতে দাম্পত্য সম্পর্ক শুধু ভোগ নয়, বরং নেক আমল হয়।
وَ اتَّقُوا اللّٰهَ
আল্লাহকে ভয় করো — দাম্পত্য সম্পর্কেও তাকওয়ার নির্দেশ।
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّکُمۡ مُّلٰقُوۡهُ
জেনে রাখো, তোমরা অবশ্যই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে — আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, তাই দাম্পত্য জীবনেও জবাবদিহির চিন্তা রাখতে হবে।
وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
মুমিনদের সুসংবাদ দাও — যারা তাকওয়ায় জীবন গড়বে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের শুভ সংবাদ।
এই আয়াত মূলত দাম্পত্য জীবনের নীতিমালা সম্পর্কে। স্ত্রীকে একটি শস্যক্ষেত্র হিসেবে তুলনা করা হয়েছে, যাতে মানুষ ফসল ফলায়, তেমনি স্ত্রী-পুরুষ একত্রে সন্তানের জন্ম দেয়। এতে বোঝানো হয়েছে, দাম্পত্য সম্পর্ক সম্মানজনক, দায়িত্বপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে সহবাস বৈধ, কিন্তু অশ্লীলতা বা পশুত্ব নয়।
দাম্পত্য জীবনে তাকওয়া অপরিহার্য।
স্ত্রীকে শুধু ভোগের বস্তু মনে করা যাবে না; বরং তাকে সম্মান করতে হবে।
সহবাসে বৈধতা আছে, তবে শরিয়তের সীমার মধ্যে।
প্রত্যেক কর্মের জন্য আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহর কথা স্মরণ ও আল্লাহভীতি জীবন গঠনে সহায়ক।
মদিনার ইহুদিদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল, কিছু নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় সহবাস করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়। মুসলিমদের কেউ সে ভঙ্গিমা অবলম্বন করলে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তখন এই আয়াত নাযিল হয়, যাতে পরিষ্কার বলা হয়: দাম্পত্য সম্পর্ক নির্দিষ্ট ভঙ্গিমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে সহবাস সন্তান উৎপাদনের অঙ্গ হিসেবে হতে হবে এবং পশুত্ব বা অনৈতিকতা এড়িয়ে চলতে হবে।