সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১৮৬ নং আয়াতের তাফসীর

١٨٦ - وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ
উচ্চারণ: ওয়া ইযা সা-আলাকা ‘ইবাদী ‘আন্নী ফাইন্নী ক্বারীব। উজীবু দা‘ওয়াতাদ-দা‘ই ইযা দা‘আন। ফালইয়াস্তাজীবূ লী, ওলিইউ’মিনু বী, লা‘আল্লাহুম ইয়ারশুদূন।
অনুবাদ: আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ

আর যখন আমার বান্দারা তোমার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে
এখানে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি বান্দাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন। ‘ইবাদী’ শব্দটি প্রিয় বান্দাদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।


فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ

তখন (বলো) আমি তো নিকটেই আছি
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে দূরে নন, বরং অত্যন্ত নিকটবর্তী। তিনি সবকিছু শুনেন, জানেন এবং অনুভব করেন।


اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ

আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে
যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে দোআ করে, আল্লাহ তা'আলা তার ডাকে সাড়া দেন। এটি বান্দার সাথে আল্লাহর সরাসরি সংযোগের প্রমাণ।


فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ

তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়
আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়ার অর্থ হলো — তাঁর আদেশ মান্য করা, তাঁর পথ অনুসরণ করা।


وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ

এবং আমার উপর ঈমান আনে
এটি দোআ কবুলের একটি মূল শর্ত — দৃঢ় ঈমান এবং আস্থাবান হৃদয়।


لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ

যেন তারা সঠিক পথে চলতে পারে
আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া ও ঈমান আনার মাধ্যমে মানুষ হেদায়েতের, সত্যের পথে চলতে পারে — এখানেই তাদের প্রকৃত কল্যাণ।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতটি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও আশা-জাগানিয়া। রোযার বিধান সংক্রান্ত আয়াতগুলোর মাঝে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে যেন বোঝা যায়, রমযান শুধু উপবাস নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাস। এখানে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি বান্দার খুব কাছেই আছেন এবং বান্দা যখনই তাঁকে ডাকবে, তিনি তার ডাকে সাড়া দেবেন। তবে এর জন্য শর্ত হলো — বান্দাকেও আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে, তাঁর ডাকে সাড়া দিতে হবে এবং ঈমান সহকারে দোআ করতে হবে।


আয়াতের শিক্ষা

  1. আল্লাহ তা’আলা বান্দার অত্যন্ত নিকটে — দূরের কোনো সত্তা নন।

  2. আন্তরিক দোআ করলে আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করেন।

  3. শুধু দোআ নয়, বরং আল্লাহর আদেশ মানা ও ঈমান রাখা জরুরি।

  4. ঈমান ও আনুগত্য মানুষকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে।

  5. রমযান হলো আল্লাহর নৈকট্য ও দোআ কবুলের মর্যাদাপূর্ণ সময়।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

সাহাবীগণ যখন রাসূল ﷺ–কে জিজ্ঞাসা করতেন, “আল্লাহ কি আমাদের নিকটে আছেন, নাকি দূরে?” — তখন এই আয়াত নাযিল হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ সরাসরি নিজেই উত্তর দিলেন — “আমি তো নিকটেই আছি।” এখানে আল্লাহর করুণা, ভালোবাসা ও দোআ কবুল করার অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে।


তাফসীরে: