আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّٰهِ أَندَادًا —
কিছু মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে অন্য মূর্তি, দেবতা বা অন্যমনস্ক বস্তু গ্রহণ করে। তারা এসবকে সমপর্যায়ের প্রতিপাদ্য করে, যা আল্লাহর একত্বের বিরুদ্ধে যায়। এই প্রথা shirk বা বহুদেববাদ বলে।
يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّٰهِ —
তারা তাদের এই কৃত্রিম প্রতিপাদ্যদের আল্লাহর মতো বা তার সমান ভালোবাসে, এমনকি অনেক সময় আল্লাহর থেকেও বেশি ভালোবাসে। এটা তাদের ঈমানের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلّٰهِ —
অন্যদিকে, যারা সত্যিকারের ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ এবং নিখুঁত, যা তাদের জীবন ও আচরণে প্রতিফলিত হয়।
وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ —
যদি অন্যায়কারী ব্যক্তিরা শাস্তির সময় তা দেখতে পারত, তারা বুঝতে পারত আল্লাহর দণ্ড ও শাস্তির ভয়ংকর রূপ।
أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيعًا —
তারা উপলব্ধি করত যে সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে এবং কেউ তাঁর ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না।
وَأَنَّ اللّٰهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ —
আল্লাহ দণ্ড ও শাস্তিতে কঠোর, তাঁর শাস্তি থেকে কোনো পলায়ন নেই।
এই আয়াতে আল্লাহ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার দুই দিক তুলে ধরেছেন। কিছু মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে অন্য বস্তু বা মূর্তি পুজো করে এবং তাদেরকে আল্লাহর সমপর্যায়ে ভালোবাসে, যা তাদের ধোঁকাবাজ এবং মূর্খতা নির্দেশ করে। অন্যদিকে, সত্যিকারের মুমিনরা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে এবং তাঁর প্রতি নিভৃত আত্মসমর্পণ করে। শাস্তির দিন অন্যায়কারীরা বুঝবে আল্লাহর ক্ষমতা সর্বব্যাপী এবং শাস্তি কঠোর। এটি বিশ্বাস ও কুসংস্কারের মধ্যে পার্থক্য ও পরিণতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা।
১. আল্লাহর পরিবর্তে অন্য মূর্তি বা প্রতিমাকে পুজো করাটা বড় পাপ।
২. মুমিনরা আল্লাহকে সর্বোচ্চ ভালোবাসে, যা তাদের জীবন গঠনে প্রভাব ফেলে।
৩. শাস্তির দিনে আল্লাহর শক্তি ও শাস্তির কঠোরতা স্পষ্ট হবে।
৪. আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো সত্যিকারের ঈমান ও তওবা।
এই আয়াতটি মানুষের হৃদয়ে শির্কের বিরোধিতা ও আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে। বিভিন্ন তাফসীর যেমন তাফসীর ইবনে কাসীর ও তাফসীর ত্বাল্লাবী এই আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে।