সূরা: ২. আল-বাকারা (اَلْبَقَرَةِ)
১০১ নং আয়াতের তাফসীর

١٠١ - وَ لَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمۡ نَبَذَ فَرِیۡقٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ ٭ۙ کِتٰبَ اللّٰهِ وَرَآءَ ظُهُوۡرِهِمۡ کَاَنَّهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
উচ্চারণ: ওয়া লাম্মা জা'আহুম রাসূলুম মিন ‘ইন্দিল্লাহি মুসাদ্দিকুল লিমা মা‘আহুম, নাবাযা ফারীকুম মিনাল্লাযীনা উতুল কিতাবা কিতাবাল্লা-হি ওরাআ’ জুহূরিহিম কা আন্নাহুম লা ইয়ালামূন।
অনুবাদ: আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রাসূল এল, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, তখন আহলে কিতাবের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দিল, (এভাবে যে) মনে হয় যেন তারা জানে না।

তাফসীর

আয়াতের প্রতিটি অংশের তাফসীর

وَ لَمَّا جَآءَهُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ
“আর যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রাসূল এলেন”—
এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি, যিনি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে প্রতিশ্রুত একজন নবী ছিলেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন মানুষের হেদায়াতের জন্য।

مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمۡ
“যিনি তাদের কাছে যা ছিল তা সত্যায়ন করেন”—
তিনি তাওরাত ও ইনজীলসহ পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের মৌলিক বার্তা ও নির্দেশনার সত্যতা প্রমাণ করেন। তার বার্তা পূর্ববর্তী কিতাবের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

نَبَذَ فَرِیۡقٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ
“তখন কিতাবপ্রাপ্তদের একটি দল বর্জন করল”—
এখানে বোঝানো হয়েছে, ইহুদিদের একটি অংশ, যারা তাওরাতের জ্ঞান রাখত, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নবী (সা.)-এর বার্তাকে অস্বীকার করল।

كِتٰبَ اللّٰهِ وَرَآءَ ظُهُوۡرِهِمۡ
“আল্লাহর কিতাবকে তাদের পিঠের পেছনে ফেলে দিল”—
এটি একটি রূপক ভাষা, যার অর্থ তারা আল্লাহর কিতাবকে অবহেলা ও উপেক্ষা করেছে; এমনকি তারা জানতেও যে এ কিতাবে নবী (সা.) সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।

كَاَنَّهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
“যেন তারা জানেই না”—
তাদের আচরণ এমন ছিল যেন তারা কখনোই জানত না যে নবী (সা.)-এর আগমন পূর্ব থেকে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ছিল। এটি ছিল তাদের জ্ঞান গোপন করার ভণ্ডামিপূর্ণ অবস্থান।


আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াতে ইহুদিদের একাংশের মুনাফিকি, ঈর্ষা ও দ্বিচারিতার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তারা নিজেদের ধর্মগ্রন্থে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্বেও তা অস্বীকার করে। কারণ তারা এই নবীর আগমন মেনে নিতে চায়নি, যিনি তাদের সম্প্রদায়ের বাইরের একজন। ফলে তারা এমনভাবে অবহেলা করে যে, যেন তাদের কোনো পূর্বজ্ঞানই ছিল না। এতে বোঝা যায়, জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও ঈমান না আনা — এটা শুধু অজ্ঞতার বিষয় নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবাধ্যতারই নামান্তর।


আয়াতের শিক্ষা

  • সত্য জেনে তা গোপন করা বা অস্বীকার করা গুরুতর অপরাধ।

  • ঈর্ষা এবং গোঁড়ামি কখনো কখনো মানুষকে হেদায়াত গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে।

  • ধর্মীয় জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমল না করলে বা সত্য গ্রহণ না করলে সেই জ্ঞান মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

  • নবী মুহাম্মদ (সা.) পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং সর্বশেষ রাসূল।


নাযিলের প্রেক্ষাপট (সাবাবুন নুজুল)

এই আয়াত মদীনায় অবস্থানরত ইহুদিদের সম্পর্কে নাজিল হয়। তারা ছিল আহলে কিতাব, তাওরাতের জ্ঞান ছিল তাদের কাছে। তাওরাতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্বেও তারা তা গোপন করে দেয়, এবং নবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনতে অস্বীকার করে। কারণ ছিল—দ্বেষ, অহংকার এবং নিজের সম্প্রদায়ের বাইরের একজন নবীকে মানতে না চাওয়া।


তাফসীরে:

পূর্বের আয়াত পরবর্তী আয়াত